‘স্বাদের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’ গানে লাউ মানুষকে বৈরাগী বানালেও বাস্তব জীবনে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সুস্বাদু লাউ চাষে ভাগ্য ফিরেছে কুড়িগ্রামের উলিপুরে অনেক লাউ চাষির। লাউ চাষে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক বেকার যুবক। গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। অন্য বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি পাওয়ায় খুশি এখানকার চাষিরা। খরচের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় লাউ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবারে রবি শস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫০ হেক্টর। যার মধ্যে লাউ চাষও রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে লাউ চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ও পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে বলে জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাচায় থাকা সবুজ লাউয়ের প্রতিটি ডগায় সাদা ফুলের সম্ভার। মাচার নিচে ঝুলছে লাউ আর লাউ। পোকা ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে লাউক্ষেতের সুরক্ষায় চারপাশে দেওয়া হয়েছে নেট জালের বেড়া। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সুস্বাদু এ লাউ চাষে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় সফল হয়েছেন বিভিন্ন এলাকার লাউ চাষিরা। আবহাওয়া লাউ চাষের অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। তাছাড়া লাউয়ের বীজ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কৃষিসামগ্রী সহজলভ্য হওয়ায় এসব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে কৃষকেরা লাউ চাষ করছেন। ফলে দ্বিগুণ লাভ করছেন কৃষকেরা। এক সময় যে জমিতে শুধু ধানই উৎপাদন হতো তাতে যা আয় হত তার থেকে সেই জমিতে বছরে প্রায় চার বার লাউ সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করছেন।
লাউ চাষিরা জানান, লাউ মাত্র ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। তারপর এই জমিতে করলা, সিম ও পটলের চাষ হবে। যা বোরো ও আমন ধানের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব।
উপজেলার দক্ষিন দলদলিয়া পাতিলাপুর গ্রামের ফেরদৌস আলী জানান, এবারে ২০ শতক জমিতে লাউয়ের চাষ করেছেন। লাউ বাজারজাত করা পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ছোট বড় লাউ বেঁচেছেন প্রায় ৯’শ টি। বিভিন্ন দাম ভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এখন মাচায় লাউ আছে প্রায় ২’শর বেশি। যার মূল্য হবে ৬ হাজার টাকা। সব মিলে লাউ বিক্রি হবে ২৬ হাজার টাকা। লাভের আশা করছেন ২০ হাজার টাকা। লাউ চাষে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক লাউ চাষে ঝুঁকছেন বলে জানান তিনি।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লাউ চাষিদের মধ্যে নয়ন মিয়া, রুহুল আমীন, বকুল মিয়া, আলামীন ও মহাশিন মিয়া জানান, অল্প খরচে অল্প সময়ে লাউ চাষে দ্বিগুণ লাভ করা যায়। যার কারণে লাউ চাষে ভাগ্য বদল হচ্ছে অনেক কৃষকের।
তারা আরও জানান, করলার চাষ করা মাচায় লাউয়ের চাষ করা হয়। লাউ চাষের জন্য নতুন করে মাচার প্রয়োজন হয়না। যার কারণে দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব হয়। এছড়া এবারে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় অনেক লাভবান হয়েছি বলে জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, লাউ চাষে অল্প সময়ে অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ করা যায়। লাউ চাষে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় উপজেলায় লাউ চাষের প্রতি ঝুঁকছেন চাষিরা। এবারে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারদর ভালো থাকায় লাউ চাষিরা অনেক লাভবান হয়েছেন বলে জানান তিনি।