চট্টগ্রামের নাম বিভ্রাট : সঠিক নামের তথ্য উদ্ধার (শেষ পর্ব)

আরবীতে ’শ্যাতজাম’ শব্দটি ‘সিনআলিপতে ইয়ে জিমআলিপ মিম’ দিয়ে লেখা। তাই ‘শ্যাতজাম’কে ‘শ্যাৎ-ই-জাম’রূপেও লেখা হয়। এ দুটি শব্দের লেখন ও উচ্চারণ ভিন্ন। আরবীতে ‘জ’ বা ‘জিম’ শব্দটি ‘গ’ বা ‘গাফ’ উচ্ছারিত হয়। কারণ, আরবীতে ‘গাব’ বা ম অক্ষর নেই। যেমন- মিশরের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুল নাসের এর নাম উচ্চারণ করা হয় ‘গামাল আবদুল নাসের’। সুতরাং এখানে আরবী শ্যাতজাম এর সঠিক উচ্চারণ হবে ‘শ্যাতগাম’। অন্যদিকে আরবী ‘তে’ এর উচ্চারণ বাংলায় ‘ত’ বা ‘ট’ হয়। সুতরাং আরবী শ্যাতগাম > চাটগাম। এই নামটি চট্টগ্রামের বহুল পরিচিত। যেমন- (১) শেখ-ই-চাটগাম কাজেম আলি মাস্টার। (২) খান বাহাদুর হামিদুল্লাহ খানের রচিত চট্টগ্রামের ইতিহাসের নাম ‘তারিখ-ই-চাটগাম’ এবং ‘শ্যাৎ-ই-জাম-চাটিগাম’। ইন্টারনেটে ‘চাটগাম’ শব্দের আরবী কি? জানতে চাইলে ‘চাটিজাম’ (Chatijam) আসবে।

(২) শ্যাতগাঙ্গ’ বা ‘শ্যাত-ই-গাঙ্গ’ও আরবদের দেওয়া নাম। এটির অর্থ করা হয়েছে, ‘শ্যাত> বদ্বীপ + গাঙ্গ> গঙ্গা= গঙ্গার বদ্বীপ বা গাঙ্গেয় বদ্বীপ’। আমাদের দেশে প্রচলিতভাবে নদীকেই গাঙ্গ বলা হয়। যেমনি- ‘গাঙ্গে জোয়ার এলো’, ‘গাঙ্গে মাছ ধরতে গেছে’, ‘গাঙ্গের কূল’ ইত্যাদি। সুতরাং শ্যাতগাঙ্গ বা শ্যাত-ই-গাঙ্গ-এর অর্থ নদী বিধোত বদ্বীপও হতে পারে। অর্থাৎ সবদিক দিয়েই এটি চট্টগ্রামকে নির্দিষ্ট করেছে। ড. সুনীতি ভূষণ কাননগো মশাই তাঁর A History of Chittagong, vol-1 গ্রন্থে শ্যাতগাঙ্গকে Chat-i-Gang and Cheh-ti- gang লিখেছেন। সুতরাং বৃটিশদের Chittagong যে Cheh-ti-gong থেকে নেয়া (অপভ্রংশ) তা অনস্বীকার্য। এবং শ্যাত-ই-জাম শব্দ থেকেই চাটিগাম (Chatigam)।

এবার ‘সামুন্দর’ -এর কথা ধরা যাক। আরব ভৌগোলিক খুরদাদবেহ্ (মৃত্যু ৯১২ খৃঃ) এর ‘কিতাবুল মসালিক আল-সমালিক’ গ্রন্থে এবং আল-ইদ্রিসীর লিখিত বিবরণে চট্টগ্রামের নাম ‘সামন্দর’ দেওয়া নাম। সাম (আগুন) + আন্দর (আন্দরুন) যে এলাকার ভিতরে আগুন জ্বলছে। এটি সীতাকুণ্ড + বাড়বকুণ্ড এলাকা। এটাকে ইতিহাসবিদেরা চট্টগ্রাম হিসাবে অভিহিত করেছেন। এটি ঠিক চট্টগ্রাম না হলেও এখানে তৎকালে বড় বন্দর থাকা অসম্ভব নয়। সামুন্দর নামটি এখন চট্টগ্রাম এলাকার জন্য ব্যবহৃত না হলেও বাংলাভাষায় ‘সাগর’কে ‘সমুদ্র’ এবং উর্দু ও হিন্দিতে ‘সামুন্দর’ নামে ব্যবহৃত হচ্ছে।

‘জালন্দর/জলন্দর’ -জ্বাল (অগ্নি) + আন্দর (ভিতর)। যে এলাকার ভিতরে অগ্নি জ্বলছে- এটি সীতাকুণ্ড ও বাড়বকুণ্ড এলাকা। এটি উর্দু ঘরানার শব্দ। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতে লেখা লামা তারানাথের গ্রন্থে এটি ‘জলন্ধর’ নামে উল্লেখিত হয়েছে।তবে ‘সমুন্দর’ বা ‘জ্বালান্দর’ নাম দুটি কোন ইতিহসে ব্যবহৃত হয়নি।

আরবদের দেওয়া ‘চাটগাম’, ‘চাটিগাম’ (ঈযধঃমধস,ঈযধঃরমধস) সুলতানি আমলে রাজভাষা ফারসী হওয়ায় ‘চাটগাঁও’, ‘চাটগা’ বা ‘চাটিগা’ (Chatgam, Chatigam) রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ, ফারসীতে ‘গাহ’ শব্দের অর্থ ‘স্থান’/‘এলাকা’। যেমন ‘পুড়ুত গাহ’। অর্থ উড্ডয়নের স্থান; বিমান বন্দর। ঈদগা-ঈদের নামাজ পড়ার স্থান, ইবাদতগা-ইবদত করার স্থান। (গা/গাঁ বা গাঁও এর অর্থ কোনভাবেই ‘গ্রাম’ নয়)

এখন দেখা যাক, আরব ও ফারসীদের দেওয়া নামগুলি ঐতিহাসিকেরা, পরিবাজকেরা এবং মানচিত্রে কখন কি ভাবে ব্যবহার করেছেন :- ১২০৪ খ্রিষ্টাব্টেদ বখতিয়ার খিলজি মগধ (বিহার) জয়করলে বহুসংখ্যক বোদ্ধ পণ্ডিত ‘চাটিগা’ (চট্টগ্রাম) আগমণ করেন।

১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ যখন চট্টগ্রাম দখল করেন, তখন এর নাম ছিল ‘চাটগাঁও’। Sultan Fakhruddin beautified Chatgaon…. He also built a highway from Chatgaon to Chandpur ( Fathya-e-Ibria-Sahab uddin Talish

১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে Ibn Battuta calls it Sadkawan. সাদকাওন (উচ্চারণ হবে ‘চাটগাও বা চাটগা) ইবনে বতুতা এই এলাকার নাম লিখেছেন, ‘সাতকাঁওয়ান’ > সাতকাও। ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগো এটিকে শুদ্ধ করে লিখেছেন- Satganw। ইতিহাসবিদ আবদুল হক চৌধুরী বিকৃত করে লিখেছেন, ‘সুদকাওন’, আর শ্রী পুর্ণেন্দুচন্দ্র ব্রম্মা আরও বিকৃত করে লিখেছেন, ‘সুতর কাঊন’।

ইবনে বতুতা এবং অন্যান্য পরিব্রাজক ও ইতিহাসবিদের অনেকেই ‘চাটগাম’, ‘চাটিগাম’কে ‘সাতকাঁও’, ‘চাটকাঁও’, ‘চাটিকাং’, বা ‘চাটিকিয়াং’ লিখেছেন। তবে উচ্চারণের সময় ‘কাঁ’ অক্ষরটি ‘গা’ হবে। আরবিতে গাব এ অক্ষর না থাকায় কাপ বা শ ব্যবহার হয়। যেমন- চট্টগ্রামের ষোলশহরের কাছে ‘গুদির পাড়’। এটি ‘গুদির’ শব্দ (জাহাজ নির্মাণের স্থান) থেকে এসেছে। কিন্তু আরবিতে এটি লেখা হয়েছে ‘কুদির’। সুতরাং আরবী, ফারসীর ‘কাঁও’ শব্দটি ‘গা’, ‘গাহ’ বা ‘গাঁও’ উচ্চারিত হয়। (যেমন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের নাম মামুন আবদুল কাইয়ুম। অথচ ইতিহাসে তাঁর নাম মামুন আবদুল গাইয়ুম। ‘ক’- > ‘গ’)। আর নুন বা n,an  এগুলি ঊহ্য থাকে। যেমন- Europian, Chittagonian ইঊরোপীয়, চট্টগ্রামী)

ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগো তাঁর চট্টগ্রামের ইতিহাস গ্রন্থে এর প্রভুত নামের উল্লেখ করেছেন “

The maps and charts of the European historians and Catographers of the sixteenth and seventeenth centuries,that  give information about the fact.

(1) Indis Orientais (1597 A D) shows both ‘Chatigam’ and Bengla….

(2) In Gastaldi’s map (1561 A D), ‘Chatigam’ (Chittagong) is located to the south east of Bengala.

(3) Hondius in his map of Asia (1612 A D)locates both ‘Chatigam’ and Bengala…

(4) Blaev’s map pl.lv.(1650 A D) places’Chatigam’ on the right bank of the river Karnaphuli.

(5) William Baffin’s locates ‘Catigam’ in the delta on the cosmin flu.To the east

of  Catigam. Bengla is…. (এ’গুলি আরবদের দেওয়া ‘শ্যাৎ-ই-জাম’ ঈযধঃ-র-মধস থেকে নেওয়া হয়েছে।

(6) Souson’s map (1612 A D) shows ‘Chatigan’ to the west and to the east of

a river.

(7)Piere Vander (1727 A D) places Chatgaon on the sea coast on the right bank of a river. (এ শব্দগুলি সুলতানি আমলে আরবি নাম ‘চাটিগাম’র ফার্সী রুপান্তর, ‘চাটিগা’/ ‘চাটগা’।

একথা মনে রাখা প্রয়োজন, কোন এলাকা বা দেশের নাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেই বিদেশিদের লেখায় কথায় ভাষায় এর নাম কখনো সঠিক বা কখনো বিকৃতভাবে উচ্চারিত হয়। চট্টগ্রামের নাম ‘শাতগাম’ বা ‘চাটগাঙ’ হওয়ার কারণেই চীন, আফ্রিকা, পর্তুগিজ, বৃটিশদের লেখায় এর নাম কখনো ‘সাতকাওয়াঙ’ (ইবনে বতুতা), ‘সাতকিয়াং’, চাটিকিয়াং ( চীনের রাজদূত ফেইসিন) এরা বাংলাকে লিখেছেন- ‘পাংকোলা’। সোনার গাঁওকে লিখেছেন- ‘সুওনাং-উর-কিয়াং’

কিংবদন্তি মতে চট্টগ্রামে মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আরাকান রাজ চূড় চন্দ্র সিংহ (Chulataing Tsandaya) ৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে সুলতানকে (সুরতন) পরাজিত করেন এবং কুমিরার কাছে একটি স্তম্ভে ‘চিৎ তাত গোং’ (Tsit-tat-gung) অর্থ ‘যুদ্ধ করা অনুুচিত’ বাক্য খুদাই করান। ড. আহমদ শরীফ এবং জনাব আবদুল হক চৌধুরী লিখেছেন ‘চিৎ-তৌৎ-গং’ এরই বিকৃত রূপ ‘চাটিগাঁও’। এতে প্রশ্ন জাগে, তাহলে মুসলমানদের শাসনকালে (আরব উপনিবেশ) ৮/৯ম সালে চট্টগ্রামের নাম কী ছিল? তবে চিৎ-তৌৎ- গং থেকে>চাটগাম-> চাটিগাম কোন নামই আসা সম্ভব নয়। কোন ইতিহাসে ‘চিৎ-তৎ-গং’ শব্দ বা নামের উল্লেখ বা স্বীকৃতি নেই। মোগল আমলে নবাব শায়েস্তা খান নির্দেশে বুজুর্গ উমেদ খা যখন ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানীদেরকে হারিয়ে চট্টগ্রাম জয় করেন, তখনো এর নাম ছিল ‘চাটগা’। আলমগীর নামা এ সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়, As the space between ‘Chatgaon’ and Rambu is very……(Alamgirnama)

Buzurg Umed khan very wisely ordered Mir Murtuza….on Dakhin-kol,which is close to ‘Chatgaon’.( Alamgirnama)

নবাব মীরকাশিমের আমলেও চট্টগ্রামের নাম ছিল চাটগাঁও/চাটগা- ঈযধঃমধড়হ’. ১৭৬৩ সালে ইংরেজ আমলেও তারা চট্টগ্রামকে ‘চাকলা ইসলামাবাদ’ এবং ‘সরকার-ই-চাটগাঁও’ উল্লেখ করেছেন।

The total bandobast of the 144 pargonas  into which ‘Chakla of Islamabad’ or ‘The Sarker of Chatgaon’ was divided….. আবার পরগনার উসুল লিখতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, Havilla Chatgam
সবচেয়ে মজার ব্যাপার বৃটিশ আমলে ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে স্যার উইলিয়াম জোন্স চট্টগ্রাম ভ্রমণকালে চাতক পাখি দেখে এই এলাকাকে চট্টগ্রাম/ চিটাগাং না লিখে ‘চাটিগাম’ নামে উল্লেখ করেছেন।(Hobson Jobson, p-204)

১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মুজাফ্ফর শামস বলখির লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে- ‘চাটগাও’। এবং ১৪১০ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মুদ্রায় লেখা ‘চাতগাও’। সুলতান মুবারিজ শাহের আমলে ‘চাটগাও’। রাজা গণেশ (১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দে এবং রাজা মহেন্দ্র দেবের আমলে তাঁদের মুদ্রায় (১৪১৯ খ্রীষ্টাব্দে) ‘গাম’ শব্দটি সংস্কৃতায়ন করে ‘চাটিগ্রাম’ নামে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ, তাঁদের আমলে রাজভাষা ছিলো ‘সংস্কৃত’। পরে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে চট্টগ্রামের সেনানি শাসক পরাগল খাঁর নির্দেশে রচিত ‘পরাগলী মহাভারত’ -এ কবীন্দ্র পরমেশ্বর দাস এবং ছুটি খাঁর ছুটিখানি মহাভারতে কবি শ্রীকর নন্দী ‘চাটিগ্রাম’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। (১৫১৫-১৫৩০) এই উভয় কবিই সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন। নিজাম শাহ’র সভাকবি দৌলত উজির বাহরাম খাঁ ১৬৬০-১৬৬৫ তে লিখেছেন, ‘নগর ফতেয়াবাদ দেখিয়া পুরএ সাধ চাটিগ্রাম সুনাম প্রকাশ।

সুতরাং আরবদের দেওয়া ‘শ্যাতজাম/শ্যাত-ই-জাম’ (শ্যাতগাম/শ্যাত-ই-গাম), ‘শ্যাতগাঙ্গ/শ্যাত-ই-গাঙ্গ’ নামই গ্রহণীয়। শ্যাত-ই-গাঙ্গকে ড. সুনীতি ভূষণ মহাশয় ইংরাজিতে Chat-i-gang/che-ti-gang লিখেছেন। আরবীদেও দেওয়া নাম ‘চাটগাম’, যেটা সুলতানী আমলের ফার্সী ‘চাটগা’, ‘চাটিগা’, ‘চাটিগাম’ হয়েছে। আর পরবর্তীতে সংস্কৃতায়ন হয়ে চাটিগ্রাম এবং পরবর্তীতেইংরেজ আমলে ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মুসলমানদের দেওয়া ‘চাটিগাম’ নামটি পুরাপুরি সংস্কৃতায়ন করে ‘চট্টগ্রাম’ করা হয়।

(1) In the Ain-i-Akbari, the place is named as ‘Sarkar -i-Chatgaon’ under the Sube Bangala.

(2) Talish defines ‘Chatgaon’ on the eve of the Mughal conquest….In 1722 A.D. Nawab Jafar khan( Murshid Quli khan) in his Kamil Jama Tomari or ‘perfect Rant Roll’ inclouded ‘Chatgaon’ as one of the well defined Chaklas in the Sube Bangala.

(3) Taranath states that about the time of Palas ‘Chatigrama’ was known as Ramma or Ramyabhumi.

(4) The author of the ‘Fathya-i-ibbriya’….The preeminent among those were the principalities of ‘Chatigan’ (Chittagong)  and Ramu.

(5)  Chittagong during Pathan rule…The amount of revenue ‘Chatgaon’

-6,649,410 dams.

(6) Historian Khan bahadur Hamidullah  khan writes in his ‘ Tarikh-I Chatgam’,”One Alfa Husaini of Bagdad…a great merchant, who possessed much wealth…. had repeatedly been to ‘Chatgaon’…

(7) Bocarro and the some other Portuguese historians mention Chittagong as ‘ Bandel de Chatigao’.  (চট্টগ্রাম বন্দর)

ঐতিহাসিকদের এসব নাম আরবদের শ্যাত/ শ্যাট-ই থেকে নেওয়া হয়েছে। একটিও তিৎ-তৎ-গোঙ বা বোদ্ধদের ‘চৈতগ্রাম’ বা কুলিন হিন্দুদের ‘চট্টভট্ট’ বা ‘চাট্টিলা’ বা ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানি মন্দিরে খোদাই করা ‘চাটিল্লাগ্রাম’ থেকে নেওয়া হয়নি। ইতিহাস এবং মানচিত্রে এসব নাম প্রচলিত নয়। ৮ম-১০ম খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম আরব উপনিবেসিক মুসলিম রাজ্য ছিল। এবং ১৪০০ সালে পীর বদরের ‘চাটি’ থেকেও না। আর ১৩৪০ সালে চট্টগ্রাম সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ কর্তৃক বিজিত।

ইতিহাসবিদ আবদুল হক চৌধুরী নিশ্চিতভাবে উল্লেখ করেছেন যে, চট্টগ্রাম নামটি আরকানিদের ‘চইট্টে গং’ থেকে এসেছে। যার অর্থ ‘শক্তিশালি দুর্গ’। এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, আরকান রাজ চট্টগ্রামে দূর্গ নির্মাণ করেছেন ১৫৮০-১৬৬০ এর মধ্যে। এই দুর্গকে ঐতিহাসিক তালিশ উল্লেখ করেছেন, ÔFort of Chatgaon’

১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দে ‘জোঁয়াও দ্যা ব্যরেস’ যে মানচিত্র অংকন করেছেন তাতে এই এলাকাকে ‘চাটিগাম’ বলা হয়েছে।.. ..বর্তমান কর্ণফুলীর সাথে এই নদীর সাদৃশ্য আছে। কর্ণফুলী অথবা গঙ্গানদীর মোহনা হইতে সামান্য দেশাভ্যন্তরে চট্টগ্রাম বন্দর (মানচিত্রে চাটিগাম) অবস্থিত (বন্দর শহর চট্টগ্রাম- আবদুল হক চৌধুরী)।

সুতরাং চট্টগ্রামে ‘আরব রাজ্য’ প্রতিষ্ঠাকারী আরবেরা যেভাবে চট্টগ্রাম শহরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলির নামকরণ করেছেন, তেমনি চট্টগ্রামের আদিনাম ‘শ্যাৎজাম’/‘শ্যাৎ-ই-জাম’ যেগুলির উচ্চারণ ‘চাটগাম’/ ‘চাটিগাম’ তাদেরই দেওয়া। সুলতানি আমলে ফার্সী শব্দে ‘চাটগা/ চাটগাঁও হয়েছে। পরবর্তীতে আরবি ‘চাটিগাম’র ‘গাম’কে সংস্কৃতায়ন করে ‘গ্রাম’ করা হয়েছে। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্টেদ ‘চাটিগাম’কে পরিপূর্ণভাবে সংস্কৃতায়ন করে ‘চট্টগ্রাম’ করা হয়েছে। অর্থাৎ চট্টগ্রামের মূল নাম আরবদের দেওয়া ‘শ্যাতজাম’/শ্যাৎ-ই-জাম’।

প্রথম পর্ব : চট্টগ্রামের নাম বিভ্রাট : সঠিক নামের তথ্য উদ্ধার

 

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক।