‘কী ঘটতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর’- এই কৌতুহল নিয়ে যারা দিনটির অপেক্ষা করছিলেন তাদের জন্য উত্তর হচ্ছে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো। সমাবেশ শুরুর আগে থেকেই সহিংসতা ও সংঘাত শুরু হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। সহিংসতা শুরুর পেছনে কোন পক্ষ দায়ী, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে, গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের এক সদস্যসহ ২ জন নিহত এবং পুলিশ-সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এর বাইরে পুলিশ হাসপাতাল ও বক্সে আগুন ছাড়াও প্রায় ১৯ যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এই সংঘাতের মধ্য দিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে চলে আসা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নতুন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল।
নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কয়েক দিন আগেই ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকেই বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী আগেভাগেই ঢাকায় এসে উপস্থিত হয়েছিলেন।
পথে পথে পুলিশের বাধা, তল্লাশি ও গ্রেফতারের পরও শনিবার সকাল থেকেই দলটির নেতা-কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নয়াপল্টন ও আশপাশের বিএনপির সমাবেশস্থলে হাজির হন। কিন্তু সমাবেশের সেই স্বতঃস্ফূর্ততা ও শান্তিপূর্ণ আবহ দুপুর সোয়া ১২টার পর থেকে পাল্টে যেতে শুরু করে। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে সমাবেশও পণ্ড হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষই সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে সক্ষম হয়েছিল। গত ২৭ জুলাইয়ের পাল্টাপাল্টি সমাবেশে ঢাকায় বড় জমায়েত হলেও তা কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছিল। গতকাল বিএনপির কর্মসূচির পাল্টায় আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে ‘শান্তি’ সমাবেশ করে।
ঢাকা মহানগর এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে বাধাহীনভাবেই বাস, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এসে তাদের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। নানা নাটকীয়তার পর জামায়াতে ইসলামীও আরামবাগে সমাবেশ করে। প্রেসক্লাবসহ ঢাকার আরও কয়েকটি জায়গায় গণতন্ত্র মঞ্চসহ আরও কয়েকটি দল সমাবেশ করে।
বিরোধী দল ও সরকারি দলের এসব কর্মসূচির কারণে গতকাল ঢাকা কার্যত সমাবেশের নগরীতে পরিণত হয়। সমাবেশের আগে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার যুদ্ধংদেহী বক্তব্যের কারণে জনমনে নানা উদ্বেগ, ভয় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা আগে থেকেই ছিল। সমাবেশে আসা কর্মীদের অনেকের হাতেই লাঠিসোঁটা দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে বড় সংঘাত এড়ানো গেলেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া এড়ানো যায়নি।
সংঘর্ষের জেরে বিএনপি ও জোটের দলগুলো গতকাল রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে। যদিও হরতাল সফলভাবে শেষ করতে পারেনি। এদিনও ঢাকা ও আশপাশে বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে খুব বেশি গণপরিবহন দেখা যায়নি, ছিল দূরপাল্লার বাসও। একারণে যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ফলে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশের বদলে অস্থিরতা, অনিশ্চয়তার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিবেশে প্রত্যাবর্তন আমাদের কারও কাছেই কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সংলাপই এই অচলাবস্থা কাটিয়ে শান্তির একমাত্র পথ।