বাংলা একাডেমিতে হয়ে গেল ‘মন উৎসব’
এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শিল্পী, গায়ক, নৃত্য শিল্পী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ দর্শনার্থীরা
মনের যত্ন নেওয়া ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতাকে উৎসাহ দিতে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘‘মন উৎসব’’। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শিল্পী, গায়ক, নৃত্য শিল্পী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ দর্শনার্থীরা। মন উৎসবের আয়োজকরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন, শিল্পী শামির আহমেদ হিমেল, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট-মিউজিশিয়ান ড্যানি আমিন, মনোবিজ্ঞানী জারিন এবং স্বাধীন সাংবাদিক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আসিফ বিন আলী। আর্ট ক্যাম্প, শিল্প প্রদর্শনী, পারফরম্যান্স আর্ট এবং মন্ত্রমুগ্ধকর সঙ্গীতানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন ছিল এই উৎসবে। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্যানেল আলোচনা। লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু, কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং শৈশব বিকাশের গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলেন। প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল এবং ‘‘সিঙ্গেল মাদার’’ রুমা দর্শকদের সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। যা অনুষ্ঠানে একটি আবেগঘন আবহ যোগ করে। উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করে জলের গান, আহমেদ হাসান সানি, ঋতু রাজ, রোকসানা আমিন এবং তুলকালাম। পরিবেশনার পাশাপাশি শিল্পীরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতায় নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ও গল্প বলেছেন দর্শকদের, যা তাদের অনুপ্রাণিত করেছে। শেহজাদ চৌধুরী সঞ্চালনা করেন ‘‘আর্টিস্ট টক’’। যেখানে শিল্প এবং স্থায়িত্বের মধ্যে সংযোগ উল্লেখ করে পুনঃব্যাবহারযোগ্য উপকরণ থেকে পণ্য তৈরির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন অংশগ্রহণকারীরা। অর্থী আহমেদ নৃত্য পরিবেশন করেন। সুচি মিমি এবং বুশরা পরিবেশন করেন লোকসঙ্গীত।
উৎসবে ভয়, আত্মবিশ্বাস, উদ্বেগ এবং চিন্তাকে থিম করে সাতজন শিল্পীর ২০টি শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়েছে। শিল্পকর্মগুলো দর্শনার্থীদের চিন্তার জগতকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। উৎসবের অন্যতম সংগঠক শামির আহমেদ হিমেল বলেন, “যদিও আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন করি, তবে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষার উন্নয়নে আমাদের দেশে প্রায় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা ও শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা এই উৎসবের আয়োজন করেছি, এবং আমরা প্রতি বছর আয়োজনটি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” আরেক সংগঠক আসিফ বিন আলী মনের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের মনের যত্ন নিতে হবে, এই সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া খুবই জরুরি।” আয়োজনের সংগঠক মো. সেলিম হোসেন একটি সুখী ও সুস্থ মনের জন্য মনস্তাত্ত্বিক উপাদানগুলো ব্যবহারে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেছেন। তিনি আয়োজনটিকে বার্ষিক অনুষ্ঠানে পরিণত করার ওপর জোর দিয়েছেন। মন উৎসব সৃজনশীল শিল্পকলা ও শিক্ষামূলক আলোচনার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রচারে শিল্পী, মনোবিজ্ঞানী, শিক্ষার্থী এবং জনসাধারণকে একত্রিত করেছে। পেশাদার মনোবিদ এবং শিল্পীদের একটি নিবেদিত দলের সংগঠিত এই উৎসবের লক্ষ্য, শিল্প উদযাপন করার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোঝাপড়া বাড়ানো।