গাজায় রাতভর বিমান হামলায় নিহত ৭১
◊ রাফাহ সীমান্তে হাজার হাজার বিপন্ন মানুষ ◊ বাইডেন ইসরায়েল যাচ্ছেন আজ ◊ হামাসকে সমর্থন দিলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন জুটবে না: ট্রাম্প
অবশেষে ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজায় সোমবার রাতভর ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। এত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ জন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। বহু মানুষ আহত হয়েছে। ইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে ফিলিস্তিনের গাজা ছাড়ার এখন একমাত্র পথ মিশর সংলগ্ন রাফাহ সীমান্ত। এই সীমান্ত পয়েন্টে জড়ো হয়েছেন গাজার হাজার হাজার মানুষ। সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতির সময় সীমান্তটি সাময়িকভাবে পুনরায় চালু করা হবে এমন আশায় সোমবার সকালে বাস্তুহারা মানুষ সেখানে ছুটে যান।
এদিকে ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধাদের রকেট হামলার মধ্যেই বুধবার ইসরায়েল সফর করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরায়েল থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। অন্যদিকে
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থনকারী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন জুটবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যদি আবার ক্ষমতায় যেতে পারেন, তবে হামাস সমর্থনকারীদের অভিবাসী হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন তিনি। খবর-বিবিসি ও আলজাজিরার
ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজায় সোমবার রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫৪ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হলেও পরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ জনে। এ পর্যন্ত গত ১০ দিনে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ২৮০৮ ছাড়িয়েছে। রাফাহ ও খান ইউনিসের বাড়িগুলোকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে ২০০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে তারা। আল জাজিরায় আরবি ভাষায় পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চিকিৎসা সহায়তা কর্মীরা একজন আহত ব্যক্তির শরীরের ব্যাগে এবং অন্য একজন গুরুতর আহত রোগীকে স্ট্রেচারে করে দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ১১ হাজার মানুষ। সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ দিকে হামাসের হামলায় ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে তিন হাজার। গাজার হাসপাতালগুলোতে প্রতি মিনিটে একজন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ফলে হাসপাতালগুলোতে হামলায় আহত রোগীর চাপ ব্যাপকহারে বেড়েছে বলে দাবি করছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের রকেট হামলার পর ইসরায়েল বিমান হামলা শুরু করার পর গাজা থেকে বেরিয়ে আসার সব পথ বন্ধ রয়েছে। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সোমবার ইসরায়েল সফরে যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এই অঞ্চলের ছয়টি আরব দেশ সফরের পর তিনি মানবিক সহায়তা সরবারহ ও বিদেশি পাসপোর্টধারীদের সরিয়ে নিতে সীমান্তটি পুনরায় খুলে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে ইসরাইলে রয়েছেন। ব্লিঙ্কেন ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব জেমস ক্লিভারলি দুজনই বলেছেন, তারা রাফাহ সীমান্ত আবার চালু করতে ইসরায়েল, মিশর ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কাজ করছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা অবরোধ করায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে অন্যান্য প্রবেশপথগুলো বন্ধ রয়েছে। হামাসের হামলার জবাবে গাজায় বিমান হামলা শুরু করার আগে পানি, খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরাইল।
প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায় জ্বালানি-ত্রাণবাহী গাড়ি: গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জ্বালানি ও ত্রাণসামগ্রী বহনকারী বেশ কিছু গাড়ি রাফাহ ক্রসিংয়ের মিশর সীমান্তের দিকে অবস্থান করছে। এসব গাড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছে। তবে ইসরায়েল বলছে, হামাস ইসরায়েলের জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। ইসরায়েলের দাবি, গাজায় ১৯৯ জনকে আটকে রাখা হয়েছে। হামাসের হামলার পর ইসরাইলের বিমান হামলায় গাজায় প্রায় ২ হাজার ৫০ জন মারা গেছে। ১০ লাখের বেশি মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়েছেন।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি বলেন, গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ কমানো খুবই জরুরি। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। কায়রো গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা পাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করছে। মিশর চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো এবং কিছু গাজাবাসীকে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারে।
বিদেশি নাগরিকদের রাফাহ ক্রসিংয়ে যাওয়ার পরামর্শ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের রাফাহ ক্রসিংয়ের দিকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সীমান্তটি পুনরায় খোলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগ গ্রহণযোগ্য নয়: মিশর ও অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলো বলছে, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের দেশত্যাগ গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ এটি তাদের ভূমি থেকে বিতাড়নের সমান হবে।
ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধাদের রকেট হামলার মধ্যেই বুধবার ইসরায়েল সফর করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরায়েল থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা সম্পর্কে বাইডেন আলোচনা করবেন। এছাড়া অভিযানের মধ্যেও বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে তিনি ইসরাইলের কাছ থেকে শুনবেন।
ইসরায়েল সফর শেষে তিনি জর্ডানের আম্মানে যাবেন। সেখানে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
নিরাপত্তা উদ্বেগ: এদিকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইসরাইল সফরের সিদ্ধান্ত ‘হালকাভাবে নেওয়া হয়নি’। তিনি বলেছেন, এটি খুব সংক্ষিপ্ত একটি সফর। জর্ডানের আম্মানে যাওয়ার আগে বাইডেন প্রথমে তেল আবিব যাবেন। দেশটিতে সফররত মার্কিন কূটনীতিক ও আইন প্রণেতারা কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলে হামাসের রকেট হামলার কারণে নিরাপদ আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এর আগে সোমবার নিরাপত্তার জন্য অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে তেল আবিবের একটি বাঙ্কারে কয়েক মিনিটের জন্য আশ্রয় নিতে হয়েছিল। বাইডেনের সফর সম্পর্কে কিরবি বলেন, যদি সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বিশ্বাস না করি তাহলে আমরা এই সফরে যাচ্ছি না। বাইডেনের লক্ষ্য: সংবাদ সম্মেলনে জন কিরবি বলেন, বাইডেনের প্রধান লক্ষ্য ইসরায়েলের সঙ্গে ‘আমাদের সংহতি পুনঃনিশ্চিত করা’ এবং গাজার বেসামরিক লোকদের সাহায্যে সুবিধা দেওয়া। তিনি মানবিক সহায়তার বিষয়টি নিয়ে এমনভাবে আলোচনা করবেন যা হামাসের উপকারে আসবে না।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থনকারী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন জুটবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যদি আবার ক্ষমতায় যেতে পারেন, তবে হামাস সমর্থনকারীদের অভিবাসী হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন তিনি।