চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১ ও ২ নং ওয়ার্ড এবং হাটহাজারী উপজেলা নিয়ে গঠিত হাটহাজারী-বায়েজিদ চট্টগ্রাম-৫ সংসদীয় আসন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে এটির অবস্থান ২৮২। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী (২০১৮) এই আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৪,৩০,০২৭ জন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও হেফাজত ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি কউমি মাদ্রাসা এবং হালদা নদীসহ চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক থাকায় এই আসনটি নিয়ে সরকারের রয়েছে কড়া নজর।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় চট্টগ্রামের অন্যান্য আসনের ন্যায় চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ) আসনেও পড়েছে ভোটের আগাম হাওয়া। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন প্রত্যাশীরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগদিয়ে কৌশলে জানান দিচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে অনেকটা প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ জানান দিলেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলনের পাশাপাশি গোপনে এগোচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। এ আসনের বর্তমান সাংসদ ১৪ দলের শরিক দল জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি এই আসনে একাধিকবারের সাংসদ এবং জোট সরকারের মন্ত্রীও। তবে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বার বার আওয়ামী লীগের কাঁধে চড়ে এমপি হওয়া ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ হাটহাজারীর উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেননি বলে অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের। এবার এই আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে দলের মনোনয়ন পেতে মরিয়া একাধিক নেতা। বর্তমানে দলীয় সাংসদ না থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন দলটির একাধিক নেতা-কর্মী। আসনটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এবার প্রার্থী হতে চাইছেন। সেই হিসেবে এবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম দল থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে জোর প্রত্যাশা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশসহ দলের অঙ্গ সংগঠনের।
পাশাপাশি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য ইউনুস গণি চৌধুরীও মনোয়ন প্রত্যাশী হিসাবে আলোচনায় আছে এলাকায়। এছাড়াও দলের মনোনয়ন চাইতে পারে বলে গুঞ্জন আছে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম রাশেদের নামও। যদিও মাঠে ময়দানে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ সালামের পক্ষে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কাজ করতে দেখা যায় তাঁকে।
অন্যদিকে প্রকাশ্যে না থাকলেও ভেতরে ভেতরে এই আসনে আগামী নির্বাচনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে ৪ দলীয় জোটের পক্ষে মনোনয়ন দেবেন বলে আশা তার কর্মি-সমর্থকদের। তবে এই আসনের স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মিদের প্রত্যাশা জোটের নয় দলের নেতা-কর্মিদের মনোনয়ন দিলে ঝিমিয়ে পড়া সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এবার দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তাঁর ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের নামও আছে আলোচনায়। এছাড়া সাবেক চাকসু ভিপি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম এর কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার নামও আছে বেশ আলোচনায়।
গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এই আসনে বার বার সংসদ সদস্য হওয়া ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জোটের শরীক দলের নেতা হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতা-কর্মিরা খুবই হতাশ। তাছাড়া সারা দেশে সরকার যে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে সেভাবে হাটহাজারীতে উন্নয়ন করতে পারেনি দাবী স্থানীয় আওয়ামী লীগের। এই আসনের স্থানীয় জাতীয় পার্টির কর্মি-সমর্থকদের দাবী হাটহাজারীতে ব্যারিষ্টার আনিসের বিকল্প নেই। তাঁরা মনে করছেন আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে তিনি জোট থেকে নিশ্চিত মনোনয়ন পাবেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে সারা চট্টগ্রামের ন্যায় হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ উন্নয়ন বরাদ্ধ দিতে সহযোগিতা করেছেন বলে দাবী স্থানীয়দের। চট্টগ্রাম উত্তর জেলার রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজ খ্যাত এম এ সালাম মনোনয়ন পেলে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ ভোট দিয়ে জয়ী করবেন বলে বিশ্বাস স্থানীয় নেতা-কর্মিদের বড় একটি অংশ। তাঁদের মতে, জোটের শরীক থেকে নির্বাচনে প্রার্থী দিলে নেতা-কর্মিরা মেনে নেবেনা বলে দাবীও করেন। প্রয়োজনে দলের যে কাউকে দিলেও আপত্তি নেই, তবে আর কোন শরীক দলের প্রার্থী দিলে দলের ভীষণ সাংগঠনিক ক্ষতি হবে বলেও মনে করেন তারা।
বিএনপি জোটগত ভাবে নির্বাচন করলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মনোনয়ন পাবেন বলে আশা তাঁর নেতা কর্মিদের। তবে আগামী নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মিদের প্রত্যাশা দল থেকে মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তাঁর ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন। বিএনপির একটি অংশ চাকসু ভিপি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হককে মনোনয়ন দেবার পক্ষে। অন্যদিকে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা মাধ্যেমে মনোনয়ন নিয়ে প্রতিনিয়ত ঝড় তুলছেন সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম এর কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা সমর্থিত স্থানীয় নেতা-কর্মিরা। স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মনে করছেন নিরপেক্ষ ভোট হলে দল থেকে যিনি মনোনয়ন পাবেন তিনিই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
সবমিলে চট্টগ্রামের এই সংসদীয় আসনে প্রধান দুই দলের নেতা-কর্মীরা জোটের প্রার্থী না দিয়ে দলের প্রার্থী দেবেন বলে আশাবাদী। দুই দলই কোন্দল মিটিয়ে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারলে নির্বাচনে জয় সহজ বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। যদি জোট ও দলের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন তাহলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া কঠিন সমীকরণ মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।