ভয়াবহ রূপে যানজট

# টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক খানাখন্দ #বৃষ্টির পানি সড়কে আটকে যানজট সৃষ্টি হয় -মো. হাদিউজ্জামান, সড়ক দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ # সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে ট্রাফিক সদস্যরা তৎপর -মো. মনিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক), ডিএমপি

দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে গতকাল রবিবার রাজধানীতে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক জায়গায় রাস্তায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যানজট আবার ভয়াবহ রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। তাদের উদাসীনতায় রাজধানীবাসীকে আবার যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এ শহরে গাড়ির সংখ্যার হিসেবে যথেষ্ট রাস্তা নেই। এ কারণে যানজট এ নগরীর দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা।

বনশ্রী থেকে গণ পরিবহনে করে যমুনা ফিউচার পার্কে চাকরি করেন জেরিন সিকদার। তিনি বনশ্রী থেকে আসতে আড়াই ঘণ্টা লেগে গেছে। রাস্তায় যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকেন। শুধু জেরিন সিকদার নয়। বাড্ডা থেকে শ্যামলি একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন কামরুল ইসলাম। তিনি ৩ ঘন্টাই আটকে দিলেন যানজটে। এ ছাড়া অধিকাংশ সড়কে দেখা গেছে পায়ে হেঁটে অনেকেই অফিসে যাচ্ছেন। বেশির ভাগ সড়কে ছিলো যানজট।
মতিঝিল সেনা কল্যাণ ভবনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন দিদার হোসেন। তিনি সকাল ৯টায় মিরপুর মোল্লা বাড়ির মোড় থেকে রওনা দেন অফিসে যেতে সময় লেগে যায় ৩ ঘন্টা। তিনি বলেন, যানজট আমার নিত্যদিনে সঙ্গী। প্রতিদিন এইভাবে যানজট ঠেলে অফিসে আসতে হয়। তাছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা খুবই করুন। ট্রাফিক পুলিশ ঘুষ নিয়ে ব্যস্ত যানজট ঠেকাবে কখন।
আনিচুর রহমান নামের এক যুবক। তিনি বলেন, কল্যানপুর থেকে তেজগাও যেতে সময় লেগে যায় আড়াই ঘন্টা। অফিসে দেড় ঘন্টা বিলম্বে ডুকতে হয়েছে। তিনি বলেন, ফার্মগেট খামারবাড়ি এসব এলাকায় গাড়ির চাপ বেড়েছে, ফলে গাড়ির সারি দীর্ঘ হচ্ছে।
রাজধানীর তেজগাঁও একটি বেসরকারি টেলিভিশনে চাকরি করেন প্রদীপ কুমার চৌধুরি। তিনি কল্যানপুন থেকে তেজগাঁও আসতে দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তিনি বলেন, প্রতিদিন যানজটে গাড়ির মধ্যে আটকে থাকতে হয় দুই ঘণ্টা। আবার কখনো ৩ ঘন্টা লেগে যায়। তিনি বলেন, কাজ থাকলে সময় নিয়েই বের হই। আজও সকাল সকাল বের হয়েছিলাম। কিন্তু বাসে ওঠার পর থেকেই যানজট ঠেলেই যেতে হচ্ছে। একই জায়গায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
জানা যায়, ঢাকার অনেক রাস্তা ভাঙা। কোথাও কোথাও আবার খানাখন্দ আছে। বৃষ্টির সময় এসব খানাখন্দে পানি জমে থাকার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরে ধীরে গাড়ি চালান তারা। আর রাস্তায় পানিবদ্ধতা তৈরি হলেও স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ যানজটে পড়তে হয় তাদের।
ট্রাফিক পুলিশ বলেছে, রাস্তায় মোটরসাইকেল রেখে আরোহীদের দাঁড়িয়ে থাকা, ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যানবাহন অচল হয়ে পড়া, রিকশা-অটোরিকশার অলিগলিতে ঢুকে পড়ার প্রবণতা যানজটের অন্যতম কারণ। গণপরিবহনের চালকেরা বলছেন, রাস্তার খানাখন্দের কারণে তারা স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালাতে পারেন না। রাস্তায় পানি জমে থাকলে গাড়ি আটকে যায়। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন নাজুক ড্রেনেজ-ব্যবস্থার কথা।
এক বাস চালক বলেন, এই রুটে এলিফ্যান্ট রোড ও মালিবাগ এলাকার রাস্তায় ভাঙা এবং খানাখন্দ রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব তখন অন্য সড়কগুলোয় পড়ে। তখন দেখা যায় এক ঘণ্টার রাস্তা চার ঘণ্টায়ও পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয় না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মনিবুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তায় গাড়ি কম বের হয়েছিল। দুই দিন ছুটি শেষে সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবস ফলে গাড়ির চাপ। ট্রাফিক সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ে আসার। সবাইকে অনুরোধ করব ট্রাফিক আইন মেনে চলতে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, নাজুক ড্রেনেজ-ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টির সময় পানি দ্রুত সরে যেতে পারে না। ড্রেনেজ-ব্যবস্থার সঙ্গে খাল বা লেকের যে ‘কানেকটিভিটি’, খালের সঙ্গে নদ-নদীর ‘কানেকটিভিটি’ থাকার কথা, সেটি নেই। ফলে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে সড়কে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।