ঢাকার সব প্রবেশ পথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা

ঢাকা শহরের সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ মুখে শনিবার সকাল ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

কর্মসূচি ঘোষণার সময় ফখরুল বলেন, ভোটাধিকার হরণকারী কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও ইসি পুনর্গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে শনিবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার সব প্রবেশ মুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো।

তিনি বলেন, আমরা যুগপৎ ধারায় যে আন্দোলন শুরু করেছি, সেই অনুযায়ী আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। পরপর যে কর্মসূচিগুলো ঘোষণা হবে তার মধ্যে কালকের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ মুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করছি। আমাদের এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা আশা করবো প্রশাসন এই কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে দিয়ে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা একা নই, বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বলছে- এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

গত দুই দিনে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, কিন্তু গ্রেপ্তার করে কি সমাবেশে আটকাতে পেরেছেন, পারেননি।

প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, দলীয় সরকারের আদেশ-নির্দেশে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেবে না। অন্যায়, বেআইনিভাবে জনগণকে গ্রেপ্তার করবেন না।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, যারা মহা-সমাবেশে এসেছে তারা কোথায় থেকেছে? হোটেলে বা আত্মীয়র বাড়িতে। যাদের আত্মীয়র বাড়ি নেই তারা ফুটপাতে থেকেছে। পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি তাদেরকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। না হলে ৯০ এর মতো জেলের তালা ভেঙে আনব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বক্তব্যে কি শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে নামবে? ভাষণে যদি দেশ স্বাধীন হতো, তাহলে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে দেশ স্বাধীন হতে হবে। দেশ স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।

তিনি আরো বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। কিন্তু আদালত তাকে জামিন দিলো না কেন। কারণ, এই উচ্চ আদালত, নিম্ন আদালত শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় রাখতে চায়। সুতরাং যে আদালতে শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয়, যে প্রশাসন তার হাতের মুঠো থেকে বেরুচ্ছে না সেই অবস্থায় ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। যারা ঢাকায় আছেন, তারা ঢাকায় থাকেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না।

গয়েশ্বর আরো বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে-মেয়ে কোনও দেশে আছেন জনগণ জানে না। এখন শেখ হাসিনা কোন দেশে যাবেন তা তিনি জানেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, আমরা বাংলাদেশে নতুন করে গণতন্ত্র কায়েম করবো। খালেদা জিয়ার নির্দেশক্রমে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। আজকের সমাবেশ এই প্রত্যয় ব্যক্ত করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হবে, এটা ভুলে যান। সংবিধান রেখেছেন, সংবিধান তো গিলে খেয়ে ফেলেছেন। এখন কোনও সংবিধান আছে? নির্বাচন কমিশন আছে? আমার বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার আবার চুরি করবেন, এটা হবে না। সংবিধান আপাতত একদিকে থাকুক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমানউল্লাহ আমান এবং দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালামের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মীর নাছির উদ্দিন, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, মোহাম্মদ শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, আব্দুস সালাম আজাদ।

এছাড়াও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রবিন, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ লাখো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচএফ