সিএমপিতে ডেঙ্গু আতঙ্ক, ৫২ পুলিশ আক্রান্ত

চট্টগ্রামে এখন ডেঙ্গুর মহাবিপদ চলছে। দিনের পর দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ডেঙ্গুর আতঙ্ক ভর করেছে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশেও (সিএমপি)। এ পর্যন্ত সিএমপির ৪২ জন ও জেলা পুলিশের ১০ জন সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ভিড় লেগেছে। এই হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ১২ জন হলেন সিএমপির আর বাকি দুজন জেলা পুলিশের। এদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা সংকটাপন্ন।

দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুই পুলিশ সদস্য ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার গ্রেড-২ তে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। দুই পুলিশ সদস্যের একজন হলেন পাঁচলাইশ থানার এএসআই আবদুল আজিজ। তিনি গত চারদিন ধরে ওই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এএসআই আবদুল আজিজ দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগে হঠাৎ গায়ে জ¦র চলে এসেছিল। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। আমার রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।’

চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হয়। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার দুই ধরণের। এর মধ্যে গ্রেড-১ এ আক্রান্ত হলে রক্তক্ষরণ হয় না। তবে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার গ্রেড-২ তে আক্রান্ত হলে রক্তক্ষরণ হয়।

চিকিৎসকদের মতে, একজন সুস্থ মানুষের প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ দেড় লাখ থাকা উচিত। কিন্তু ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে আক্রান্ত হয়ে অনেকের রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা ৫ হাজার পর্যন্ত নেমে আসে। এতে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে।

জানা গেছে, দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৫২ জন পুলিশ সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে সিএমপির উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তা নেই। আক্রান্তকারীদের মধ্যে এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল রয়েছেন। তবে সিএমপির বাইরের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কয়েকদিন আগে তিনি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে থানার পুলিশ সদস্য যারা টহল ডিউটি করে, তারা বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, গত ১১ জুলাই দামপাড়া পুলিশ লাইনে সিএমপির মাসিক কল্যাণ সভায় দুজন চিকিৎসক এনে ডেঙ্গু বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের কাউন্সেলিং প্রদান করা হয়। ডেঙ্গু নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মনোবল যাতে ভেঙ্গে না পড়ে সেজন্য সিএমপি এই পদক্ষেপ নেয়।

জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (পাবলিক রিলেশন) স্পিনা রাণী প্রামাণিক দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, ‘সিএমপির অনেক পুলিশ সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গু নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক আছে বটে, তবে পাশাপাশি সচেতনতাও রয়েছে। গত ১১ জুলাই সিএমপির মাসিক কল্যাণ সভায় দুজন চিকিৎসক এনে পুলিশ সদস্যদের কাউন্সেলিং প্রদান করা হয়।’

এখন পর্যন্ত সিএমপির থানার ওসি থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্পিনা রাণী প্রামাণিক।

এদিকে চট্টগ্রামে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন গড়ে ৫৭ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় ডেঙ্গু আতঙ্ক গ্রাস করেছে চট্টগ্রামবাসীকে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ২১৩ জন। এর মধ্যে চলতি জুলাই মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪৮ জন। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ২৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। আর চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট ১৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।