ভারতের যে খাবার ভারতীয়ই নয়

রাস্তায় বেরোলে ঝাল দিয়ে ফুচকা খেতে বা শেষ পাতে মিষ্টি কে না পছন্দ করেন! তবে আমরা সচরাচর রাস্তাঘাটে যে মুখরোচক খাবারগুলি খেয়ে থাকি, তার বেশির ভাগই ভারতীয় খাবার নয়। এদের জন্ম হয়েছে অন্য দেশে। আবার ভারতে জন্ম হলেও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে নানা গল্প। এই তালিকায় ফুচকা, শিঙাড়া থেকে শুরু করে গোলাপজাম, হালুয়ার মতো মিষ্টিও রয়েছে।

মিষ্টির দোকানে গেলে রসগোল্লা, ল্যাংচার পর যে দিকে নজর পড়ে তা হল গোলাপজাম। এই মিষ্টি ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, মলদ্বীপ-সহ নানা দেশে বিখ্যাত। তবে, এই মিষ্টির জন্ম ভারতে নয়। অধিকাংশের মতে, মধ্যযুগে ইরান থেকে এই মিষ্টির আবির্ভাব।

গোলাপজাম বা গুলাব জামুন নয়, এর প্রাচীন নাম ছিল ‘লুকমত-আল-কাদি’। মনে করা হয়, ভারতে এই মিষ্টি বানানোর সূত্রপাত এক তুর্কি নেতার হাত ধরে। অনেকে আবার মনে করেন, মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের প্রধান খানসামা প্রথম এই মিষ্টি বানিয়েছিলেন।

আট থেকে আশি— ফুচকা সকলেরই প্রিয়। উত্তরপ্রদেশে চাটজাতীয় খাবারের জনপ্রিয়তা খুবই বেশি। তাই ফুচকার জন্মস্থল বলতে সকলে উত্তরপ্রদেশের কথাই মনে করেন। অধিকাংশের দাবি, মহাভারতের যুগে ফুচকার আবির্ভাব। দ্রৌপদী নাকি পাণ্ডবদের প্রথম ফুচকা তৈরি করে খাইয়েছিলেন। অবশ্য এর নাম নাকি তখন আলাদা ছিল। ‘জলপত্র’ বলে পরিচিত ছিল এখনকার ফুচকা।

দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের মধ্যে ধোসা, ইডলি বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু ইডলি প্রথমে ভারতে বানানো হয়নি বলে অধিকাংশের দাবি। গুজরাতের ইতিহাসবিদরা মনে করেন, সৌরাষ্ট্র থেকে আসা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ইডলি ভারতে আসে। অনেকে মনে করেন, ইডলির জন্ম শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কা থেকে যাঁরা ভারতের দক্ষিণে এসে থিতু হয়েছিলেন, তাঁরাই ইডলির সঙ্গে পরিচয় ঘটান ভারতীয়দের।

দিল্লিতে তখন সুলতানদের রাজত্ব। সেই সময় থেকেই নাকি শিঙাড়ার চল রয়েছে। আমির খসরু তাঁর লেখায় এর উল্লেখ করেছিলেন। ইবন বতুতার বিবরণী থেকেও শিঙাড়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে, তখন শিঙাড়া পরিচিত ছিল অন্য নামে— ‘সাম্বুসাক’। এমনকি, মুঘল দরবারেও খানাপিনার সময় শিঙাড়া বেশ প্রচলিত ছিল। তবে কেউ কেউ মনে করেন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, পর্তুগাল, ব্রাজিলের খাস্তা খাবারগুলির সমন্বয়ে শিঙাড়া তৈরি হয়েছে ভারতে।


বলিউড এবং পাও ভাজি— মুম্বই নগরী যেন এই দুইয়ের জন্যই বিখ্যাত। তবে অনেকে মনে করেন, মুম্বইবাসীর সঙ্গে পাও ভাজির পরিচয় হয়েছিল অন্য দেশের হাত ধরে। ভাস্কো ডা গামা যখন ভারতের পশ্চিম উপকূলে এসে পৌঁছেছেন, তখন তাঁকে অনেকেই পর্তুগিজ ব্রেড রোল খেতে লক্ষ করেছেন। অনেকের ধারণা, পর্তুগালের এই খাবার থেকেই উৎপত্তি পাও ভাজির।

ভারতের মিষ্টিগুলির মধ্যে হালুয়াও বেশ প্রসিদ্ধ। নানা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের হালুয়া বানানো হয়। তবে, এই হালুয়ার উৎপত্তি ভারতীয় মিঠাইওয়ালাদের কাছ থেকে নয়। ইরানে উৎপত্তি এই মিষ্টির। তার পর ধীরে ধীরে এই মিষ্টি বানানোর ধারা পশ্চিম এশিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।

জিলিপির আবিষ্কারও যেন তার প্যাঁচের মতোই জড়ানো। কেউ বলেন এর জন্ম ভারতে, আবার কেউ বলেন এর উৎপত্তি বিদেশে। তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে, পার্সিভাষী মুসলিমরা মধ্যযুগে যখন ভারতে আসেন, তখন তাঁদের সঙ্গে আসে জিলিপি বানানোর প্রণালীও। ‘জুলবিয়া’ থেকে নাম পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে জিলিপি।

পঞ্জাবিদের প্রিয় খাবারের তালিকার মধ্যে রাজমা শীর্ষস্থানীয়। কিন্তু রাজমার উৎপত্তি ভারতে নয়। এই খাবারের জন্ম মেক্সিকোতে। মেক্সিকো এবং পর্তুগালের ঘুরে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে প্রথম এই খাবার আসে বলে মনে করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন