ন্যূনতম মজুরি ২৫,০০০ টাকা না হলে ট্যানারী শিল্পের একজন শ্রমিক তার বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা মেটানো থেকে বঞ্চিত হবেন। অর্ধশত শ্রমিকের সাক্ষাৎকার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম, বাসা-ভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ন্যূনতম খরচ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দেখা গেছে।
শুক্রবার (২৯শে মার্চ) রাজধানীর তোপখানায় সলিডারিটি সেন্টারের সহায়তায় এবং ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরাম (বিএলআরজেএফ) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরেন ট্যানারী শিল্পের নেতারা।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ভুইঞা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ট্যানারী ওয়্যার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব ও বিএলআরজেএফ এর সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান এর সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, সারাবিশ্বে ন্যূনতম মজুরী নির্ধারনে স্বীকৃত এ্যাংকর মেথোডোলোজি প্রয়োগ করে ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। এ প্রক্রিয়ায় হাজারীবাগ ও হেমায়েতপুর এলাকার ২০ জন নারী ও ৩২ জন পুরুষ মিলে মোট ৫২ জন শ্রমিক এর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে খাবার, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন, পোশাক, মোবাইল, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের গড় ন্যূনতম খরচ বিবেচনায় চারজনের একটি পরিবারের মাসিক খরচ কমপক্ষে ২৫,০০০ টাকা।
আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ট্যানারী শিল্পে ন্যূনতম মজুরী সুপারিশের জন্য গঠিত মজুরী বোর্ড এর ট্যানারী শ্রমিকপ্রতিনিধি আব্দুল মালেক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজিজুল হক ভুইঞা বলেন, “এটা খুবই কষ্টকর একটা ব্যাপার যে, যখন কিছু লোক হাজার কোটি টাকা এ দেশ থেকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের দেশের শ্রমিকরা বেঁচে থাকার ন্যূনতম মজুরির জন্য আন্দোলন করছে। ২৫,০০০ টাকা মজুরি হিসেবে খুবই সামান্য এবং শ্রমিকদের এই দাবী অবশ্যই মেনে নেয়া উচিত।”
সলিডারিটি সেন্টার-বাংলাদেশ অফিস এর কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর একেএম নাসিম বলেন, “আইনে বলা আছে যে ন্যুনতম মজুরি যাই হোক না কেন, ইউনিয়ন মালিকদের সাথে দর কষাকষির মাধ্যমে তা বাড়াতে পারে। কিন্তু আমরা বাস্তবে তা কখনো দেখি না। শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ আসলে মজুরি বোর্ডের সাথে ইউনিয়নের সফল দর কষাকষির মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ট্যানারীগুলোতে নির্ধারিত মজুরি প্রায় কখনোই বাস্তবায়ন হয় না। সে ব্যাপারেও আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।”
সভায় ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এর সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ন্যূনতম মজুরি দ্রুত ঘোষণা ও বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করেন।
প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মনিকা হার্টসেল বলেন, “এটি অপরিহার্য যে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের প্রস্তাবিত মজুরি ট্যানারি শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়ের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করবে। যে শ্রমিকের শ্রম দিয়ে বিলাসবহুল চামড়ার জুতা তৈরি হয়, সে তার স্কুলপড়ুয়া শিশুর জন্য সাধারণ একজোড়া জুতা কিনতে পারে না, এটা কেন হবে?” বিজ্ঞপ্তি।