২০২৩ সাল হবে চট্টগ্রাম নগর উন্নয়নের বছর: চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ২০২৩ সাল হবে চট্টগ্রাম নগর উন্নয়নের বছর। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়নে ২ হাজার ৫শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন সেই বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে নগরীর উন্নয়ন দৃশ্যমান করতে হবে।

আগামী ডিসেম্বরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে নগরীর সড়ক সমূহের উপর চাপ পড়বে সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সঠিকভাবে উন্নয়ন কাজ করতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত: ১২শ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করে শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে কাজগুলোর গুনগতমান বজায় রেখে দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রকল্প পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলীকে নিদের্শনা প্রদান করেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সকালে চসিকের পুরাতন নগর ভনের কে.বি আবদুস সত্তার মিলনায়তনে ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ২১তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। চসিক সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ।

মেয়র বলেন, সম্প্রতি ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে নগরীর উপকূলীয় এলাকা ও বাংলাদেশের বৃহত্তম ভোগ্য পণ্যের পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাইয়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা অবর্ণনীয়। ৩৭নং ওয়ার্ডে স্লুইস গেইটের কারণে জলোচ্ছাসে কৃষি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ববরাবরে ক্ষতিগ্রস্থ ফসলি জমির ক্ষতিপুরণ প্রদান করে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহবান জনান।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোশেনের সাবেক মেয়র এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী আয় বর্ধক প্রকল্পের মাধ্যমে চসিককে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। পরবর্তীতে সে সমস্ত আয়বর্ধক প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। নগরীর কোথায়-কোথায় সিটি কর্পোরেশনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে তার একটি প্রতিবেদন তৈরী করে জানানোর জন্য বলা হলেও অদ্যাবধি সেই প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

এছাড়া চসিকের যে সকল মার্কেট রয়েছে সেগুলোর কি অবস্থা আয়ের পরিমাণ সহ প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় নি। এমনকি চসিকের যে ভূ-সম্পত্তি গুলোর নামজারি পর্যন্ত সম্পন্ন হয় নি। তিনি এস্টেট শাখাকে তিনভাবে বিভক্ত করে ভূ-সম্পত্তি শাখাকে গতিশীল করা পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিদের্শনা প্রদান করেন। সেই সাথে সভায় ভূ-সম্পত্তি শাখার জন্য আলাদা একটি স্থায়ী কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনয়নে গুরুত্বারোপ করে মেয়র বলেন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা কর আদায়ে কঠোরতা অবলম্বন না করলে রাজস্ব আয় হ্রাস পাবে। ফলশ্রুতি চসিকের বিশাল জনবলের বেতন ভাতা ও নগরীর চলমান উন্নয়ন কাজ থমকে যাবে।

তিনি রাজস্ব বিভাগকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন। এছাড়া নালার উপর অনুমোদনহীন যে স্ল্যাব স্থাপিত হয়েছে যেসব স্ল্যাবগুলোর সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ণয় করে যথাযথ ফি আদায়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। এ ছাড়াও রাজস্ব আদায়ে ক্ষেত্রে কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এমনকি চাকুরিচ্যূত করা হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্দেশ্য মেয়র বলেন, চসিক এলাকায় কোন সড়ক বাতি না জ্বললে সেই এলাকার সুপারভাইজারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, শহরে আলোকায়নে বাল্ব, টিউব লাইটসহ প্রয়োজনীয় সকল মালামাল অন্তত ৬ মাসের জন্য মজুদ রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরও বলন, চসিকে বর্তমানে যে দুটি টেন্সিং গ্রাউন্ড আছে তাতে আগামী কয়েক মাসের পর আবর্জনা রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে বিধায় হাটহাজারী এলাকায় নতুন টেন্সিং গ্রাউন্ড স্থাপনের জন্য ভূমি জোগাড়ের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে মাদারবাড়িস্থ চসিকের জায়গাটি সংস্কার করে সেখানে যান্ত্রিক বিভাগের যানবাহনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

তিনি চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক অনুমতিবিহীন সড়ক কর্তন করা থেকে বিরত থাকারসহ যে সড়ক কর্তন ফি জমা প্রদান করবে তার বাইরে সড়ক কর্তন করলে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ, ঠিকাদার ও চসিকে দায়িত্বরত প্রকৌশলীকে জবাব দিহিতার আওতায় আনার ঘোষণা দেন।

তিনি ওয়াসার কর্তৃক সড়ক কর্তৃনের ব্যাপারে কোন কোন সড়ক কর্তন করার পরিকল্পনা আছে তা চসিককে ৬ মাস পূর্বে অবহিত করার আহবান জানান। সভায় মোহরা ছাফা মোতালেব কলেজের প্রতিষ্ঠাতার আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে চসিকের অধিভূক্ত করার জন্য প্রস্তাব সবসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়।

সভার শুরুতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়নকৃত এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে কাউন্সিলরগণ কোন কোন স্থানে কী সমস্যা আছে তা প্রকল্প পরিচালককে অবগত করেন। প্রকল্প পরিচালক এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেকে অবগত করবেন এবং উভয় সংস্থার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।