১০০ শয্যার বান ইউনিটের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল

 

 

চমেক হাসপাতাল সংলগ্ন একশ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ শনিবার সকালে স্থানটি পরিদর্শনে যান মন্ত্রী।

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতে চায় চীন। আমরাও চাই একই সময়ে সবকিছু দিয়ে ইউনিটটি চালু করতে। ওই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করে আসার পর এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী চমেক হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন এবং চিকিৎসকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় হাসপাতালের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে এমআরআই মেশিন নষ্ট থাকার বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমি এই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র হিসেবে বলছি না, একজন চিকিৎসক, একজন মন্ত্রী হিসেবে বলছি- ঢাকা মেডিক্যালের পর চট্টগ্রাম মেডিক্যালের অবস্থান।

এখানে যদি এই মেশিন নষ্ট থাকে এটি ঠিক করা জরুরি।  এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন মন্ত্রী।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সারাজীবন ডাক্তারি করে আসছি। মন্ত্রী হয়েছি মাত্র ছয় মাস, এর আগে আপনাদের মত আমিও অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ আমার সেকেন্ড হোম। এখানে হাসপাতালের পরিচালক, কলেজের অধ্যক্ষ আছেন। আমি একটি অনুরোধ করবো, আপনারা আমাকে একটি তালিকা করে দেন, কোনটা কাজটা আগে করতে হবে, কোনটা পরে। ইউরোলজি ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীর চাপ দেখেছি। কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী থেকে রোগী এখানে আসছে।  চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রায় আমাকে আবেদন দেওয়া হয়, বিশেষ করে গাইনি বিভাগ থেকে। প্রায় চিকিৎসক ঢাকা চলে যেতে চায়। গাইনি বিভাগ থেকে যদি সবাই চলে যেতে চায়, তাহলে চলবে কিভাবে? আমরা একটা নীতিমালা করতে যাচ্ছি। একটা সুন্দর নীতি অনুযায়ী আমি যাতে সব মেডিক্যাল কলেজে পোস্টিং দিতে পারি- সেই কাজ করছি।

মন্ত্রী বলেন, আমি অনুরোধ করছি, আপনারা আমাকে সার্ভিস দেন। আপনাদের জন্য যা দরকার করবো। আপনাদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে মিটিং করেছি। পার্লামেন্টে এটি নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি। চিকিৎসকদের সুরক্ষা, চিকিৎসকদের মান-সম্মান এটা আমার টপ প্রায়োরিটি।

তিনি বলেন, আমি মাননীয় সংসদ সদস্যদের প্রায় সময় অনুরোধ করি- আপনারা একটু আপনাদের হাসপাতালগুলোতে যান। হাসপাতালে গিয়ে নিজেদের চেকআপ করান। তাহলে হাসপাতালের মান অনেক বাড়বে। আমি সাংবাদিক ভাইদের সবসময় বলি- এটি অভিযান নয়, এটি হচ্ছে পরিদর্শন। এ সময় জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলিকপ্টার সংযোজনের ইচ্ছে প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আজকে চমেক হোস্টেলের সামনে দিয়ে আসছিলাম। ডিজি সাহেবকে বললাম, সেই হোস্টেল আছে এখনও। এতগুলো ছেলে-মেয়ে থাকে, এটা দ্রুত সংস্কার করা দরকার। সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমাদের কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালীর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সব ডিপার্টমেন্টকে যদি স্বাবলম্বী করতে পারি তাহলে এখানে চাপ কমে আসবে।

সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন, কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার, জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরীসহ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার মান দেখতে তিনি হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন এবং হাসপাতালে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ফতেপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকও পরিদর্শন করেন তিনি।

এ সময় চিকিৎসাসেবার মান যাচাই করতে কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীর হাতে নিজের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।