হালদায় থামছে না মা মাছের মৃত্যু, দূষণের উৎস খুঁজে পাচ্ছে না তদন্ত কমিটি

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় প্রতিনিয়ত ভেসে উঠছে মৃত মা মাছ। এতে উদ্বিগ্ন ডিম সংগ্রহকারীরসহ সংশ্লিষ্টরা।

তবে বিশেষজ্ঞাদের দাবি, শাখা খাল দিয়ে কলকারখানার বর্জ্য দ্বারা নদী দূষণ ও মৎস্য শিকারীদের অপতৎপরতায় মা মাছের মৃত্যু ঘটছে। তাছাড়া নদীর ফটিকছড়ির ভূজপুর ও হারুয়ালছড়ি এলাকার দুই রাবার ড্যামে ৬ মাস ধরে জমে থাকা রাসায়নিক ও কেমিক্যাল নদীর পানির সাথে মিশে হালদার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। ফলে মরছে মা মাছ ও গাঙ্গেয় ডলফিন।

আজ রবিবার সকালে নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাটে আরও একটি মৃত কাতলা ভেসে উঠেছে। শুধু এটি নয়, গত এক সপ্তাহে নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশে বড় আকৃতির বেশ কয়েকটি কাতলা মা মাছ ও একটি অতিবিপন্ন প্রজাতির একটি মিঠাপানির ডলফিন ভেসে উঠেছে বলে জানিয়েছেন ডিম আহরণকারীরা।

তাদের দাবি আরও অনেক মৃত মা মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। নদীর কিনারায় যেসব মৃত মা মাছ দেখা যাচ্ছে সেসব উদ্ধার করা হচ্ছে। এদিকে হলদা ও কর্ণফুলী নদী দূষণের উৎসসমসূহ চিহ্নিতকরণে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ২৩ জুন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর দপ্তর কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ২৩ জুন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিদর্শন প্রতিবেদন, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি দূষণের উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ ও মতামত অত্র কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।

আজ রবিবার পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত আর জোয়ার-ভাটায় দূষিত পানি নেমে গেলে নদী কিছুটা দূষণমুক্ত হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে হালদা নদীর ভয়াবহ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত দূষণে হালদা নদীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আজ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বিশাক্ত বর্জ্য দ্বারা হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্রের পানির বিভিন্ন ভৌত-রাসায়নিক গুনাবলি পরিবর্তন হয়ে দূষিত করছে হালদার জলজ পরিবেশকে। নদী দূষণের বর্তমান পরিবেশ থেকে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার জন্য হালদার শাখাখালে যেসকল কলকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেসব কারখানার বিরুদ্ধে চিহ্নিতপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।’

তদন্ত কমিটিতে শীর্ষস্থানে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের রিসার্চ অফিসার আশরাফ উদ্দিন বলেন, তদন্ত সম্পন্ন হয়নি, ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ বা তার পরের সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী তিনি।

রাউজান উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, একটি মৃত মাছ নদীতে ভেসে উঠার পর স্থানীয়রা উদ্ধার করেছে। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনোয়ার ফেরদৌস বলেন, হালদা ও কর্ণফুলী দূষণের উৎস খুঁজে বের করতে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।