চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে দুর্বৃত্তদের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের কর্মকর্তা ও সদস্যরা।
এ সময় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ঐতিহ্যবাহী উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি তার গঠনতন্ত্র মোতাবেক নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ঐতিহ্যবাহী একটি প্রেস ক্লাব। গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে একদল দুর্বৃত্ত ঐদিন বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হামলা চালিয়েছে। তছনছ করেছে ক্লাবের বিভিন্ন কক্ষ। লুট করেছে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ। তারা ক্লাবের চতুর্থ তলায় ক্লাবের নিজস্ব তালা ভেঙ্গে নিজেদের দুটি তালা লাগিয়ে দেয়। এ অপকর্ম যারা করেছে তাদের পরিচয় সিসিটিভির ফুটেজে সংরক্ষিত আছে। বিষয়টি ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অবহিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমসমূহে এ বিষয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
ক্লাবের পক্ষ থেকে বিষয়টি চট্টগ্রামের সেনা প্রশাসনকে অবহিত করার পর গত ১২ আগস্ট সেনা গোয়েন্দা সংস্থার দপ্তরে ক্লাব কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর সেনা প্রশাসনের সহায়তায় গত ১২ আগস্ট বিকেল ৩টায় ক্লাব সদস্যরা ক্লাবের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। ক্লাব সদস্যরা অভ্যন্তরে অবস্থান নেয়ার পর বেলা অনুমান সাড়ে ৪টার দিকে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা আবারও ক্লাবের সামনে হাজির হয়ে মূল ফটকের গ্রিল ভেঙ্গে ক্লাব ভবনের চতুর্থ তলায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় ক্লাব অভ্যন্তরে শতাধিক সদস্য অবস্থান করছিলেন। বিষয়টি অবহিত হওয়ায় সেনা কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে কিছু সেনা সদস্য এসে উত্তেজনা প্রশমন করে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং উদ্বেগজনকও বটে। চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে চর দখলের মতো চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি ক্লাবের ২৮৪ জন স্থায়ী সদস্যকে চরমভাবে ক্ষুব্ধ করেছে। এ অবস্থায় যেকোনো সময় যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হতে পারে।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ১৯৬২ সাল থেকে নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের কর্মীরা এ ক্লাবের সদস্য। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বর্বরোচিত ঘটনা। ক্লাবের ইতিহাসে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা কখনো ঘটেনি। ক্লাবের সদস্যরা অত্যন্ত বেদনাহত হয়েছে এ ঘটনায়। দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্লাব নেতৃবৃন্দকে হুমকি দিয়ে আসছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা এধরনের দুঃসাহস দেখিয়েছে বলে আমরা মনে করি।
স্মারকলিপিতে এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের আবেদন জানানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সদস্যদের এক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ক্লাব সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজা সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক। বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সিইউজে’র সাবেক সভাপতি এম. নাসিরুল হক, মোস্তাক আহমেদ, নাজিমুদ্দীন শ্যামল ও মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, সাবেক সহ সভাপতি আসিফ সিরাজ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন হায়দার, কার্যকরী সদস্য জসীম চৌধুরী সবুজ ও আইয়ুব আলী, বিএফইউজে নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন তোতা, সাইফুল আলম, এস এম সরওয়ার জাহান সুমন, রফিকুল ইসলাম সেলিম, বিশ্বজিৎ বড়ুয়া প্রমূখ।
মতবিনিময়ে বক্তারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে চিহ্নিত দুর্বৃত্তের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।