খরচ কমাতে এবার হজের জন্য দুটি প্যাকেজের চিন্তা করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি এ সেক্টর দুর্নীতিমুক্ত করতেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
তিনি বলেন, আমরা হজের জন্য দুটি প্যাকেজের চিন্তা করছি। একটা কাবার খুব কাছেই যেটা আগে থেকে চলে আসছে। আরেকটা একটু দূরে হবে যেখান থেকে বাসে মিসফালা ব্রিজের কাছে নামিয়ে দেওয়া যায়। তো এভাবে যদি হোটেল ঠিক করতে পারি যাদের গাড়ির সার্ভিস আছে তাহলে আমরা আরও খরচ কমিয়ে ফেলতে পারব। প্রথম প্যাকেজ থেকে বিমান ও ঘরভাড়ার দিক দিয়ে কমাবো। আমি নিজে গিয়ে পুরা বিষয়টির তদারকি করব।
হজের বেশিরভাগ খরচ সৌদি সরকারের নির্ধারিত জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সৌদি সরকারকে আমাদের একটা বিশাল চার্জ দিতে হয় যা অনেকেই জানে না। মূলত হজের সফরে তিন জায়গায় টাকা দিতে হয়। সৌদি সরকারকে আমাদের নির্ধারিত টাকা দিতে হয়। যার বিপরীতে মিনা, মুজদালিফা, আরাফায় তারা সবকিছুর ব্যবস্থা করেন। এসবের বিল কিন্তু আমাদেরই দেওয়া লাগে। সেখানে এ, বি, সি, ডি এভাবে জোন ভাগ করা থাকে, সেটার ভাড়া তারাই ঠিক করেন।
খরচ কমানোর পরিকল্পনা জানিয়ে আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ঘরভাড়াও কমানোর চেষ্টা করব। বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমরা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে বিমানের ভাড়া কতটুকু কমাতে পারি তা ঠিক করব। এখন এনবিআরকে হাজিদের মাথাপিছু ৫ হাজার টাকা দিতে হয় । এনবিআরের সঙ্গে কথা বলে যদি এই টাকা মওকুফ করতে পারি তাহলে ৫ হাজার টাকা কমে গেল। এছাড়া ৩৫ হাজার টাকা আমরা প্রতিজন হাজি থেকে নিয়ে আবার সেটি আশকোনায় ফেরত দেই। এটি নেয়ারও দরকার কি আবার ফেরত দেয়ারও দরকার কি! এগুলো কমাতে পারলে ৪০ হাজার তো এখানেই কমে গেল। বিমান ও ঘরভাড়া যদি আরও কমাতে পারি তাহলে আশা করা যায় দুটি প্যাকেজেই কমিয়ে ফেলতে পারব ইনশাআল্লাহ।
মোট তিন জায়গায় বড় খরচ- সৌদি সরকারকে টাকা দেওয়া লাগে, বিমান ভাড়া ও বাড়িভাড়া। এই তিনটি খাত সহ আরও কিছু খাত থেকে যদি আমরা অল্প অল্প করে কমাতে পারি তাহলে আশা করি হজ ও ওমরাহর জন্য ভালো প্যাকেজ দিতে পারব।
হজ এজেন্সিগুলো খরচ কমাতে কোনো প্রস্তাব দিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাব তো (হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) আমাদেরকে ভাড়া কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দিচ্ছে। ভাড়া কমানোর জন্য তারা প্রেস কনফারেন্সও করেছে। এজেন্সি যারা আছে তাদের সঙ্গেও আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। প্রত্যেকেই খরচ কমাতে চান। তো হাব ও এজেন্সিগুলোর সঙ্গে আলাপ করে আমরা হজের খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
হজের বিমানভাড়া নিয়ে প্রতিবছরই অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিমানকে বলেছি যেখানে ওমরা করতে লাগে ৭০-৮০ হাজার টাকা। যেমন এখন ইকোনমিক ক্লাসে গেলে ২১ হাজার টাকা লাগছে। কিন্তু হজের সময় ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা হয় কেন? তারা বলছে যে আমরা খালি ফিরে আসি তাই আমাদের ফুয়েল কস্ট লাগে। ডেডিকেটেড ফ্লাইটে মানুষ আনতে পারে না বা কোনো স্থানে ট্রানজিট করতে পারবেনা এগুলো শর্ত থাকে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে খালি ফিরে আসলে বিমানের ফুয়েল খরচ কম হয় কারণ প্যাসেঞ্জার থাকেনা।
আমরা তাদেরকে বলছি আপনারা খাত বলেন যে, বিমান ভাড়া কত বা আনুষঙ্গিক খরচ কত। এগুলো আমরা তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে খরচ কমাবো। আমার মনে হয় যে আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও এই কথার সঙ্গে একমত হবেন।