স্টুপিড না হলে বিএনপি নির্বাচনে আসবে : শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, স্টুপিড না হলে বিএনপি নির্বাচনে আসবে। নির্বাচন ১০০ পার্সেন্ট ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে। কেউ মাথা ঘুরাতে পারবে না। ভোট দিতে যাবে আর আসবে। আমি যদি আজ বলি ধর, পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা হবে। এটা আমার দলের নেতাকর্মীরাই করবে।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আমার পরিবারের সদস্যরা এই বয়সেই চলে গেছেন। আমার বয়স ৬২ বছর ৯ মাস। যেকোনো সময় আল্লাহর ডাক আসতে পারে। তাই আল্লাহকে খুশি করে যাওয়া উচিত। প্লিজ আমাকে কাজ করার সুযোগ দিন। মানুষমাত্রই ভুল হয়। আমি কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিয়েন। মৃত্যুর পরে যেন সূরা ফাতিহা পড়ে আমার জন্য দোয়া করে মানুষ, এটিই আমার চাওয়া।’

শামীম ওসমান বলেন বলেন, ‘আমি এবার যখন ফিল্ড ওয়ার্কে নামবো, আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা হবে। তাদের উদ্দেশ্যে বলি, কাপুরুষের মতো বোমা হামলা কইরেন না। ২০০১ সালে আমার জন্য ২০টা মানুষ মারা গেছেন। ওই পরিবারগুলো দেখে আসেন। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলো বিধবা হয়েছে। মারতে চাইলে আমাকে ডাইরেক্ট গুলি করেন, কিন্তু বোমা হামলা করবেন না।’

এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ও মায়ের খবরই রাখে না, কর্মীদের খবর কী রাখবে?

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের একজন এমপি ছিলেন। এক সময় জাতীয় পার্টি করতেন, তারপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি আবারও আওয়ামী লীগ হয়ে বিএনপিতে। এখন নাকি নতুন দলে ভিড়তে চাচ্ছে। তৃণমূলে, বিএনএফে নক করছেন এখন। এত বড় পল্টিবাজ, তাই তাকে আর কেউ নিতে চাচ্ছে না। তার আমলে আমাদের সুন্দর আলী ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বিএনপির তৈমূর সাহেবের ছোট ভাই, কোনো দল করত না। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের বারো জন লোককে মারা হয়েছে। যারা মানবাধিকারের কথা বলে, আমাদের নজরুল ইসলাম সুইটকে জেলখানা থেকে রিমান্ডের নাম করে নিয়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এর চেয়ে বড় আইনের ধর্ষক হতে পারে না। এখন উনি নতুন নাটক করছেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কি দেন নাই, আমার ব্যাপার না। মনোনয়নপত্র জমা না হওয়া পর্যন্ত তা বাতিল করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। এটা স্ট্যান্ডবাজি হচ্ছে। শামীম ওসমান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমরা ক্ষমতায়। আমি ২০১৪ সালে এমপি হয়েছি। জাতির পিতার কন্যা বলেছে কোনো প্রতিহিংসা নয়। শয়তানের কাজ শয়তানি করা। আমরা ওদের মতো হবো না। কষ্ট হয়েছে, বুকে পাথর চাপা দেওয়া আছে।

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ ছিল না যখন তৈমূর ভাই, সিরাজ ভাই ও কালাম ভাইরা দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আমি পাশ করার পর বিএনপির সদ্য সাবেক সাংসদ সিরাজ ভাইকে সালাম করেছি। এটা ছিল নারায়ণগঞ্জের কালচার। সে সময় কোনো সহিংসতা হয়নি। আমরা চেয়েছি সহবস্থানে থাকতে। কিন্তু হঠাৎ নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে চেঞ্জ আসে। ডিজিটাল যুগে দেশে আঠারো কোটি ক্যামেরা আছে। রাজনীতির নামে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নারায়ণগঞ্জে কোথায় ছিল আমরা জানতাম। দেখতে চেয়েছিলাম শুধু কী করে। এই ভদ্রলোক (গিয়াসউদ্দিন) সভাপতি হওয়ার পর কাঁচপুরে ঘটনা ঘটিয়ে ওরা আড়াইহাজার যায়। সেখানে এক পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে মারতে দেখা গেল। পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হতেই পারে। কিন্তু আমরা কি পশু হয়ে গেলাম? ঢাকায় একজন পুলিশকে নির্মমভাবে কোপানো হলো। এগুলো দেখেছি আমরা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে টলানো এত সহজ না। জাতির পিতার সাথে তার কন্যার একটা ডিফারেন্স আছে। জাতির পিতা সবাইকে বিশ্বাস করতেন সেই সুযোগ নিত বিশ্বাসঘাতকরা, জাতির পিতার কন্যা বিশ্বাসঘাতকদের চিনে রেখেছেন। তার ওপর আল্লাহর রহমত আছে। গত দুই বছর ধরে শুনছি সরকার পড়ে যাবে; ক্ষমতায় আসছি এসব কিচ্ছু হবে না। নির্বাচন হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে।

এ সময় বিদেশিদের দরজায় জোরে লাথি দেওয়ার কথা বলেন এ সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ১০০ পার্সেন্ট ফেয়ার নির্বাচন হবে। কেউ ঘাড়ও ঘোরাতে পারবে না। যারা নকল করে পাস করে তাদের জন্য নয়, তবে আমাদের জন্য এটা সুখবর। আমরা যারা সারা বছর রাজপথে থাকি, পড়ালেখা করি। আমরা চাই রাজনীতিটা রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকুক।এ সময় আগামী কয়েকদিনে দেশে সহিংসতার চেষ্টা করা হবে বলে নিজের ধারণার কথা বলে শামীম ওসমান।

তিনি বলেন, সামনে আর কয়টা দিন। আগামী ১৫/২০ দিন দেশব্যাপী সহিংসতার চেষ্টা করা হবে। যারা করাবে তারা কিন্তু আড়ালেই থাকবে। যারা করবে তারা ফেঁসে যাবে। আমাদের এলাকার পাগলদেরও আমরা চিনি। এবার ক্ষমতায় আসলে দুটি জিনিস ছাড় দেওয়া হবে না। একটা মানি লন্ডারিং আর আরেকটা দুর্নীতি।