ফের সীমান্তে বেপরোয়া ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনী (বিএসএফ)।নিরস্ত্র শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশিদের একের পর এক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের সীমান্তরী বাহিনী বিজিবি বিবৃতি আর প্রতিবাদ লিপিতেই সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নানা ইস্যুতে যখন উত্তেজনা বিরাজ করছে ঠিক এমন সময়ে আঠারো ডিসেম্বর বেনাপোল ও শার্শা সীমান্তে তিন জন বাংলাদেশীকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আবার ওই সীমান্ত এলাকায় এমনও গুঞ্জন চলছে এদের দিয়ে স্বর্ণ পাচার এর কাজে পাঠিয়ে এদেশের গোল্ড সিন্ডিকেটের সদস্যরা স্বর্ণ আত্নসাতের জন্য এসব পাচারকার দের (জন) হত্যা করেছে।
ভারতীয় বিএসএফ ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশি নাগরিক জাহাঙ্গীর, সাকিব, ও সাবুর আলীকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হাত পা কোমর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এসব অঙ্গ ভেঙ্গে চুরে দিয়েও তারা ক্ষান্ত হয়নি। পাষন্ডরা শীতের ঠান্ডা পানিতে তাদের ফেলে দেয়। হয়ত কেউ জ্যান্ত মরা থাকলেও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভাঙ্গার কারনে পানি থেকে উঠতে না পেরে সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।
সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি নাগরিকরা কি ভাবে মারা গেল বা বাংলাদেশ সীমান্ত কি ভাবে পর হয়ে ভারত গেল এমন প্রশ্নের জবাবে পাচভুলোট ক্যাম্পের বিজিবি জানায় সীমান্ত এলাকা ছোট খাট জায়গা নয়। হয়ত তারা সুযোগ বুঝে যেতে পারে। তবে বিজিবি মৃত দেহ একজনকেও চেনে না বলে জানায়। বিজিবি বলে সকলে অজ্ঞাত আমরা কারো নাম জানি না বা এখানে কারো স্বজনদের দেখা যায়নি। পুলিশ লাশ নিয়েছে তারা হয়ত তদন্ত করে লাশ সনাক্ত করতে পারবে।বিজিবির দায় সারা কথা যা একজন অতি সাধারন মানুষও বুঝতে পারে।
শেখ হাসিনা সরকার একদিকে ভারতকে একতরফাভাবে ট্রানজিট, বন্দর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে ব্যবসাসহ নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে গেছে, অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশকে আন্তসীমান্ত নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়নি। সীমান্তে হত্যাকান্ড বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিলেও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। অথচ সীমান্তে বিএসএফের নিয়মিত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে কড়া ও স্পষ্ট অবস্থান নেয়া, প্রতিটি ঘটনার বিচার ও তদন্ত দাবি করা, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে জবাবদিহি চাওয়া এবং প্রয়োজনে বারবার হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিষয়টিকে দ্বিপীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করার কোনো চেষ্টাই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে মতায় আসা অন্তবরতী সরকারের আমল থেকে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে বলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। কিন্তু তাও হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান হয়। চোরাচালানিদের হত্যা করা হয়। মনে হয় যেন সীমান্তে গরু জন্ম নেয় আর তা বাংলাদেশে পাচার করা হয়। বাস্তবে এই সব গরু আনা হয় ভারতের অভ্যন্তরে দুই-আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরের হরিয়ানা, পাঞ্জাব থেকে। গরুগুলো হাঁটিয়ে, ট্রাক-ট্রেনে করে আনা হয়। তখন কেউ দেখে না! তারা আটকায় না। কারণ, তারা ভাগ পায়। এখানে আসল কথা হলো দুর্নীতি, ভাগ-বাঁটোয়ারার মাধ্যমে সব করা হয়। যখন ভাগ-বাঁটোয়ারায় মেলে না, তখন বিএসএফ হত্যা করে। বাংলাদেশকে চাপে রাখতে সীমান্ত হত্যা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবছরই সীমান্ত সম্মেলনের আয়োজনের করা হয়, প্রতিবছরই সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হয় না। মানুষ মরে, খুন হয়। বলাবাহুল্য, যে অধিকাংশই বাংলাদেশের। এরপরও আমাদের সীমান্তরী বাহিনী নীরব থাকে। বাংলাদেশের সঙ্গে মাত্র দুটো দেশের সীমানা রয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। কিন্তু, ভৌগোলিক অবস্থার কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানার প্রকৃতি ভিন্ন। সেই অর্থে একমাত্র ভারতের সঙ্গেই আমাদের কার্যকর সীমানা। এই একমাত্র প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনায় যদি জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীরব থাকা হয়, তাহলে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানাবিধ বিরূপ প্রশ্ন জাগার আশঙ্কা থেকেই যাবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে মতায় আসা অন্তর্র্বতী সরকারের আমল থেকে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে বলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাচভুলোট এলাকার জনৈক এক ব্যক্তি বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীদের কিছু অসাধু সদসদের সহযোগিতায় এদেশের চোরাচালানিরা ফেনসিডিল ও গাজার চালান নিয়ে আসে ওপার থেকে। আবার এপার থেকে এসব চক্র স্বর্ণ নিয়ে যায়।