‘সি ফুড শো’ মৎস্য খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে: মৎস্যমন্ত্রী

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অ্যাকোয়াকালচার ও সি ফুড শো আয়োজন দেশের মৎস্য খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে মন্তব্য করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, আগামী ১৯ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকোয়াকালচার ও সি ফুড শো ২০২৩ আয়োজন করা হচ্ছে। এটি হবে দেশের মৎস্য খাত নিয়ে সবচেয়ে বড় পরিসরের একটি আয়োজন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে এ আয়োজন অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ আয়োজন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে, দেশের চাহিদা পূরণে এবং দেশে-বিদেশি বিনিয়োগের একটা নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

। শনিবার (১০ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড সি ফুড শো ২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত অবহিতকরণ কর্মশালা ও প্রেস মিটে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, জার্মানি, স্পেনসহ অন্যান্য দেশের মাছ আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তাদের কাছে আমাদের মৎস্য খাতের উন্নয় চিত্র তুলে ধরতে হবে। মাঠপর্যায়ে তাদের কাজ করার সুযোগ ও ক্ষেত্র তুলে ধরতে হবে। এ আয়োজনে মৎস্য খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্তদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য কতটা বন্ধুত্বপূর্ণ জায়গা, সেটা সারা বিশ্বে তুলে ধরতে হবে। আমাদের মৎস্য খাতকে বহুমুখী ব্যবহারের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। মৎস্যজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারে এগিয়ে যেতে হবে। সেই ব্যবহারের কাঁচামাল মাছ আমাদের রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উৎসে কর, বাইরে থেকে আমদানি করা মেশিনারিজের ওপর আরোপিত করসহ নানা রকম কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এভাবে সরকার সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই সুযোগ-সুবিধার কথা বিদেশিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া দরকার।

দেশের মৎস্য খাতের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে শ ম রেজাউল বলেন, বর্তমানে প্রায় ৬০ ভাগ প্রাণিজ আমিষের জোগান দিচ্ছে মাছ। প্রতিদিন মাথাপিছু ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে আমরা ৬৭ দশমিক ৮ গ্রাম মাছ গ্রহণ করছি। রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকালে বিশ্বের যে তিনটি দেশ মৎস্য উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম এবং বদ্ধ জলাশয়ের মাছ উৎপাদনে পঞ্চম।

তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন ছিল ২৭ দশমিক ১ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ৫৯ লাখ মেট্রিক টন। একই সময়ে ইলিশের উৎপাদন ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৫ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।  ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি জিআই সনদ লাভ করেছে। বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনের সক্ষমতা সাফল্যের সঙ্গে দেখাতে সক্ষম হয়েছে।

একটা সময় কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে মাছ রফতানি বিপন্ন অবস্থায় পড়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে নিরাপদ ও মানসম্মত মাছ রফতানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে আন্তর্জাতিক মানের মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি করা হয়েছে। মাছ রফতানির ক্ষেত্রে যেসব দেশ যেভাবে কমপ্লায়েন্স চায়, সেভাবে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের মাছ এখন গুণগত মানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় চমৎকার হিসেবে সমাদৃত হচ্ছে। সে কারণে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের মাছের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. তপন কান্তি ঘোষ এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শ্যামল দাস। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার স্ট্র্যাটিজিক এনগেজমেন্ট লিড মঈন উদ্দিন আহমেদ।

এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, রফতানিকারক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।