সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান, রাজশাহীতে বড় জয় লিটনের

বিএনপিবিহীন রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই প্রার্থী। সিলেটে নৌকা প্রতীকে মো. আনোয়ারুজ্জামান তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টি সমর্থিত নজরুল ইসলাম বাবুলের চেয়ে ৬৮ হাজার ২৯৩ ভোট বেশি পেয়েছেন।

অপরদিকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। রাজশাহীতে মোট ১৫৫টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের লিটন পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯৭ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুরশিদ আলম (হাতপাখা) পেয়েছেন ১৩ হাজার ৩৯৩ ভোট। যদিও ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন মুরশিদ আলম।

বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে দুই সিটিতে একসাথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। রাজশাহী-সিলেট দুই জায়গাতেই ইভিএম-এ ভোট নেয়া হয়। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ করেন ভোটাররা। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েক জায়গায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

তবে বড় ধরনের কোনো গোলমালের খবর পাওয়া যায়নি। ভোটগ্রহণ শেষে বুধবার বিকেলে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।

সিলেটে দশ বছর পর মেয়র পেলো আওয়ামী লীগ

দৈনিক দেশ বর্তমান-এর সিলেট প্রতিনিধি সাইফুর তালুকদার জানান, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টানা দীর্ঘ ১০ বছর পর নগর ভবনের কর্তৃত্ব ফিরে পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সিসিকের ভোট গ্রহণ শেষে বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ১ লাখ ১৮ হাজার ৬১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩২১ ভোট।

টানা দুই মেয়াদের পর ৬৮ হাজার ২৯৩ ভোটের ব্যাবধানে সিসিকের মেয়র পদ পেল আওয়ামী লীগ। গতকাল বুধবার রাতে ভোট গণনা শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনে মেয়র পদে ৪জন দলীয় প্রার্থী ও ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাকারী অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন- জহিরুল ইসলাম (জাকের পার্টি), শাহজাহান মিয়া (স্বতন্ত্র), সালাহউদ্দিন রিমন (স্বতন্ত্র), আব্দুল হানিফ কুটু, মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (স্বতন্ত্র)।

এদিকে ভোটের দিনের শুরুতেই নিজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে পেশী শক্তি প্রয়োগ এবং বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন জাপার প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। আর দুপুরের পরে অনিয়মের অভিযোগ করে ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিমন।

এছাড়া ভোটের কয়েক দিন পূর্বে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান। ভোটগ্রহণকালে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম নিয়ে কিছু জটিলতা দেখা দিলেও তা বেশী সময় স্থায়ী হয়নি। কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোট দিতে দীর্ঘ সময় লেগেছে অনেকের। ভোটে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

নির্বাচনের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গত সোমবার থেকে মাঠে ছিলেন ১৪ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও। এমনকি সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনকে ঘিরে পুরো নগরী ছিল চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে বেস্টিত।

এছাড়াও আইন শৃংখলা রক্ষায় র‌্যাব ও পুলিশের নিজস্ব মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে ছিল। ভোটের দিন সকাল ৮টায় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠানটুলা শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে স্বপরিবারে ভোট দেন। আর সকাল ৯টার কিছু পর জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম বাবুল সুবিধবাজার এলাকায় আননন্দনিকেতন কেন্দ্রে ভোট দেন।

নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তাৎক্ষনিক এক প্রতিক্রিয়ায় নব নির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল দাবী করেছেন সবই কমিশনের সাজানো নাটক।

এদিকে, ৪২টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে জামায়াত মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত দলটির কয়েকজন সাবেক নেতাকর্মী বিজয়ী হয়েছেন।

রাজশাহীতে আবারও মেয়র নির্বাচিত লিটন

আমাদের রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ইভিএম-এ হওয়া মোট ১৫৫টি কেন্দ্রে লিটন পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯৭ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুরশিদ আলম (হাতপাখা) পেয়েছেন ১৩ হাজার ৩৯৩ ভোট। যদিও নির্বাচন বয়কট করেছেন মুরশিদ আলম।

বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই নগরীর ১৫৫টি কেন্দ্রে কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়ায় ভোটগ্রহণ চলে। এরপর রাতে নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা চারজন। তার মধ্যে ইসলামী আন্দোলন পরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় তাদের প্রার্থীর নাম ব্যালটে থেকে যায়। বড় ধরনের গোলযোগ না হলেও দুটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত বেঁধেছিল। রাজশাহীতে একজন মেয়র, ৩০ জন সাধারণ কাউন্সিলর, ১০ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন।

বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে কত সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন, সেই হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে নির্বাচনে ৫২ থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। নির্বাচনে মোট ১৫৫টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্থাপন করা হয় ১ হাজার ৫৬০টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। ঢাকায় বসে সিসি ক্যামেরায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) কমিশনের সদস্যরা।