নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বেড়েছে মশার উপদ্রব। শুধু রাতের বেলাতে নয় দিনের বেলাতেও মশার উৎপাত বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতির ফলে দিনে-রাতে সমানতালে মশা কামড়াচ্ছে বলে জানান ওয়ার্ডবাসী। ঘরে বাইরে কোথাও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর খোলা জায়গায় এক মিনিটও দাড়াঁনোর উপায় নেই। যেকোনো খোলা জায়গায় দাঁড়ালেই মাথার ওপর ঝাঁক বেঁধে উড়তে থাকে মশা। ঘরে, বাইরে, কর্মস্থলে সবখানেই মশায় অতিষ্ঠ সিটির বাসিন্দারা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ওয়ার্ড পড়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায়। দেশের অন্যতম শিল্পনগরীতে পরিণত এ স্থানটিতে ২ লাখ ৬০ হাজারের অধিক জনসংখ্যার বসবাস।
সিটি কর্পোরেশন তথ্য সূত্রে জানা যায়, প্রতি ওয়ার্ডে পাঁচজন করে সিটি করপোরেশন লোক নিয়োগ দিয়েছে মশার ঔষধ ছিটানোর জন্য। সে অনুযায়ী ১০টি ওয়ার্ডে ৫০ জন কর্মী থাকা সত্বেও তবে কেন কোনো সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ? সে প্রশ্ন রাখেন সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দারা।
সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলরের বক্তব্যে মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহন করলেও সিটিবাসীর অভিযোগ মিলছে না কোনো সুফল। এছাড়াও তারা বলছেন মশা নিধক কর্মীদের ঔষধ দিতে দেখে না। এদিকে জনপ্রতিনিধিরা বলছে এখনও সিটি করপোরেশন থেকে তাদেরকে মশা নিধনের কার্যকর কোনো ঔষধ দেওয়া হয়নি। তবে দুই এক দিনের মধ্যে ওষুধ দেয়া সিটি কর্পোরেশন থেকে দেয়া হবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপন ও ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী ইফতেখার আলম খোকন।
নাসিক ৭নং ওয়ার্ডবাসীদের ভাষ্যমতে, শীতের শেষ দিক থেকে শুরু করে এখন পযর্ন্ত রাতের বেলা তো দূরের কথা দিনের বেলাতেও ঘরে বা বাহিরে বসা যায় না। এতো মশা যে মশারি টানিয়ে ঘুমালেও কোনো কাজ হয় না। মশা মারার জন্য আগে হ্যান্ড স্প্রে দিয়ে ঔষধ দিতো এখন তাও দেয় না। বড় বড় কালো মশার কামড়ে বাচ্চা আর প্রাপ্ত বয়স্ক সবারই কামড়ানো স্থানে ফুলে লাল হয়ে যায়। মশার জ্বালায় মানুষ এখন এক জায়গায় ঠিক মতো বসতে পারে না। নাসিকের নির্ধারণ করা ট্যাক্স আমরা সঠিক মত প্রধান করতেছি তবু মশা তাড়াতে ব্যর্থ সিটি কর্পোরেশন। কোনোভাবেই মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না বলে জানান ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
নাসিক ৬নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা খাদিজা বেগম বলেন, মশার যন্ত্রনায় আমরা অতিষ্ঠ। মশাগুলো সাইজে খুব বড়। শরীরে বসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কামড় দিয়ে চলে যায়। ছেলে মেয়ে মশার যন্ত্রণায় পড়ার টেবিলে বসতেই পারেনা, তাই উপায় না পেয়ে দিনেও মশারি টানিয়ে রাখতে হচ্ছে। মশারি, কয়েল কিংবা ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমরা মেয়র আইভীর কাছে দাবি জানাই দয়া করে আমাদের মশার যন্ত্রনা থেকে রক্ষা করেন।
এদিকে মশাবাহিত রোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন সামনে বর্ষা মৌসুমে মশার উৎপাত আরও বাড়বে। মশা নিধনে এখন থেকেই সিটি কর্পোরেশনকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। নতুবা মশার কামড়ে আক্রান্তদের ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ নানা জটিল রোগে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান বলেন, আমরা নিয়মিত মশার ঔষধ দিচ্ছি। আমি চেষ্টা করছি যেন মশা কমে যায় তবে বর্তমানে মশা নিধকের ঔষধের দিক থেকে সিটি করপোরেশনে একটি ঘাটতি রয়েছে। যে তারা এখনো ঔষধ আমাদের দেয় নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি দুই একদিনের মধ্যে আশা করছি ঔষধ হাতে পেয়ে যাবো। তবে মশার প্রজনন বন্ধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই জানে মশা কোথায় জন্মে, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সে বিষয়ে সচেতন হলে মশার উৎপাত কমে আসবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন বলেন, ফগার মেশির স্প্রে করে প্রথম দিকে মশা নিয়ন্ত্রণ করা হতো। তবে এই কীটনাশকের ধোঁয়া জিনিসটা ভালো না। প্রত্যেকটা এলাকায় যতটুকু সামর্থ আছে আমাদের, তা দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি মশা নিয়ন্ত্রণ রাখার। কিন্তু মশার এত উৎপাত যে, আমাদের নিয়ন্ত্রণ করাটাও কঠিন হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন ওষুধ দেয়ার কথা বলেছে তা পেলেই খুব শীঘ্রই মশার উপদ্রব কমবে বলে জানান কাউন্সিলর খোকন।