সিদ্ধিরগঞ্জে বিতর্কিত শ্রমিক লীগ নেতা সাদ্দাম ফের বেপরোয়া

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : শ্রমিক লীগের রাজনীতি না করেও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক লীগের বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব পদ পরিচয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সুমিলপাড়া মুনলাইট এলাকার রওশন আলীর পুত্র সাদ্দাম হোসেন। শ্রমিক লীগের পদ পরিচয়ে দলের প্রভাবশালীদের নাম ভাঙ্গিয়ে ইপিজেডসহ বিভিন্ন বানিজ্যিক দপ্তরে ক্ষমতার আধিপত্য বিরাজ করছেন তিনি।

এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এখানে দল নয় নিজের ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিল করতেই অবৈধ পন্থায় দলের সুবিধাভোগী নেতাদের ব্যবহার করে সাদ্দাম এ পবিচয়ে সর্বত্র বিরাজ করছেন বলে ত্যাগী ও তৃনমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ। তার কর্মকান্ডে দলের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভাজন ।

এদিকে সদস্য সচিব পদ বাগিয়ে ধরাকে সড়াজ্ঞান করে নানা অপকর্মে একাধিকবার আলোচনায় আসলেও এবার ইপিজেডের এক প্রতিষ্ঠানের দুই বিদেশী কর্মকর্তার উপর হামলা চালিয়ে ফেঁসে যান সুকৌশলী সাদ্দাম। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা রুজু হয়। এনিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। বাড়ছে সংঘাতের শঙ্কা।

সম্প্রতি আদমজী ইপিজেডে একটি প্রতিষ্ঠানে নিজের একক আধিপত্য ও ক্ষমতার দাম্ভিকতা বজায় রাখতে ওই প্রতিষ্ঠানেরই বরখাস্তকৃত এক কর্মকর্তা তার অনুগত জহিরুল ইসলাম কে নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের বিদেশি কর্মকর্তার পরিবহনকৃত মাইক্রোবাসে হামলা করে বিদেশী দু’জন কর্মকর্তারকে গুরুতর আহত ও ভাংচুর করেন।

এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলায় সাদ্দামসহ ওই কর্মকর্তাকেও অভিযুক্ত করা হয়। এঘটনাটি এখন “টক অব দ্যা সিদ্ধিরগঞ্জ”।

জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি আদমজী ইপিজেডের কিডো বিডি কোম্পানি লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠানের বিদেশি কর্মকর্তার পরিবহনকৃত মাইক্রোবাসে হামলা করে বিদেশি দুজন কর্মকর্তারকে গুরুতর আহত ও ভাংচুর করে সাদ্দাম ও জহিরুল ইসলাম সহ বেশ কয়েকজন।

এ ঘটনায় গত ১৮ জানুয়ারি মাইক্রোবাসের চালক মো. রাসেল মিয়া সাদ্দাম ও জহিরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে নিজে বাদি হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।

অভিযুক্ত জহিরুল ইসলাম কুমিল্লা জেলাধীন ফুল মিয়ার ছেলে ও সাদ্দাম হোসেন সুমিলপাড়া মুনলাইট পশ্চিম এলাকার রওশন আলীর ছেলে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৭ জানুয়ারি বিকেলে আদমজী ইপিজেড থেকে কর্মকর্তাদের নিয়ে কিডো বিডি কোম্পানির একটি মাইক্রোবাস সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি বাসট্যান্ডের সামনে পৌঁছালে পথিমধ্যে রাস্তার দুই দিক হতে অজ্ঞাতনামা কয়েক জন বিভক্ত একদল সন্ত্রাসী পথরোধ করে গাড়ীর ভেতরে থাকা কর্মকর্তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি পাথর নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।

এতে গাড়ীর গ্লাস ভেঙ্গে ভিতরে থাকা দুই দক্ষিন কোরিয়ার নাগরিক সোক হি লি ও ইওন সোক হো গুরুতর আহত হন এবং গাড়ী ভাঙচুর করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়।

এদিকে সাদ্দামসহ অভিযুক্ত সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য দাবি জানান ইপিজেডের তালিকাভুক্ত একাধিক ব্যবসায়ী। তারা আশংকা করছেন নানা অপকর্মে অভিযুক্তরাসহ অসাধুদের চিহ্নিত করে এদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে আদমজী ইপিজেডের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিঘ্নিত হয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ইয়াউর জানান, অভিযুক্তরা থানায় জামিন নামা জমা দিয়ে গেছেন। বিষয়টি তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, শ্রমিক লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, শ্রমিকলীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার জন্য প্রথমে ওই ব্যক্তিকে শ্রমিকলীগের যেকোনো কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তবে আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা দিয়েছে।

সাদ্দাম হোসেন পূর্বে কখনো শ্রমিকলীগের সঙ্গে যুক্ত না থেকেও অবৈধ ও অনৈতিকভাবে দলের শীর্ষ একটি মহলকে ম্যানেজ করে গত বছরের ২৬ মে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের পূর্বের আহ্বায়ক প্রস্তুতি কমিটি বাতিল করে গঠনতন্ত্র না মেনে সদস্য সচিব বনে যান। অবশ্য এ কমিটিতে সাবেক সভাপতি আব্দুস সামাদ বেপারীকে আহ্বায়ক করা হয়।

আগামী ছয় মাসের জন্য ওই কমিটির অনুমোদন দেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক কে এম আজম খসরু।

এরপরই সিদ্ধিরগঞ্জে শ্রমিক লীগের এই কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে দলের শীর্ষ ও তৃনমূল নেতাকর্মীরা

ওই সময় সাদ্দামের কমিটির আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ বেপারীও বলেন সদস্য সচিব হওয়া সাদ্দাম হোসেন কখনো শ্রমিক লীগের কোন ওয়ার্ড কমিটির সদস্যও ছিলেন না। সে যেহেতু কখনো আমাদের কমিটির সদস্য ছিলেন না বিধায় তার সদস্য সচিব পদ পাওয়ার কথা না। আমি নিজেও এ কমিটির বিরোধিতা করছি।

এ কমিটির বিষয়ে আমিও কিছু জানিনা, আমাকেও কোনো কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি। এই কমিটিতে আমাকে আহ্বায়ক করা হলেও আমি এর সাথে সম্পৃক্ত নই। এরপর থেকেই সাদ্দাম ধরাকে সড়াজ্ঞান করে নিজের ইচ্ছেমতো দল বহির্ভুত একের পর এক কর্মকান্ড চালিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন।