শ্রীপুরে দুর্নীতির সংবাদের জেরে সাংবাদিকের ফেসবুক আইডি বারবার উধাও

দুই পুলিশ উপপরিদর্শকের কল রেকর্ড ফাঁস

গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ওসি আব্দুল বারিকের বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিকের ফেসবুক আইডি নষ্ট করার জন্য চুক্তির অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর ২০২৫) রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. মোজাহিদ তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিওর মাধ্যমে এ অভিযোগ জানান।

মো. মোজাহিদ দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) ও দৈনিক দেশ বর্তমান পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি ও পেজ থেকে সমাজের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে থাকেন।

গত ১৫ অক্টোবর “ওসি বারিকের বাণিজ্যকেন্দ্র শ্রীপুর থানা: ঘুষে হালকা হয় মামলা, গভীর রাতে ছেড়ে দেন আসামি” শিরোনামে দেশ বর্তমান পত্রিকায় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সাংবাদিক মোজাহিদ। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওসির অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের দাবি জানান হাজারো সাধারণ মানুষ। এর পর থেকেই সাংবাদিক মোজাহিদের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি একাধিকবার সাসপেন্ড করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা ও সাইবার বিশেষজ্ঞ আরিফ বলেন,
“আমি মূলত জয়দেবপুর থানাসহ আশপাশের এলাকায় যেসব মানুষ ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন, তাদের ফেসবুক আইডি ডিজেবল করার কাজ করে থাকি। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে প্রকৃত ভুক্তভোগীর স্বার্থে এসব কাজ করি।”

আরিফ আরও বলেন, “কয়েকদিন আগে শ্রীপুর থানার এসআই মনোয়ার পরিচয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি একটি ফেসবুক আইডির লিংক পাঠিয়ে বলেন, ‘আইডিটা হ্যাক করতে হবে।’ এরপর একটি পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে বলেন, ‘এই ভিডিওটি সেই আইডি থেকে পোস্ট করতে হবে, ক্যাপশনে লিখতে হবে- আমি এতোদিন যা করেছি ভুল করেছি, আর কোনো ভুল করব না।’ পরবর্তীতে এসআই নাজমুল ও ওসি আব্দুল বারিক স্যারের সঙ্গেও একই বিষয়ে কথা হয়। আমি শুরুতে ২ লাখ টাকা দাবি করলেও এক বন্ধুর রেফারেন্সে অনেক কম টাকায় কাজটি করে দিই। পরে জানতে পারি, যাঁর আইডি হ্যাক করেছি, তিনি সাংবাদিক মোজাহিদ— যিনি গাজীপুরের সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করেন ও দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করেন। তখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমি অনুতপ্ত হই এবং সাংবাদিক মোজাহিদের আইডি ফিরিয়ে দিই।” সাইবার বিশেষজ্ঞ আরিফ আরও বলেন, “আমি নিজের ভুল স্বীকার করছি। এ ঘটনায় এসআই নাজমুল, এসআই মনোয়ার ও ওসি আব্দুল বারিক সরাসরি জড়িত ছিলেন। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে ওসি বারিক স্যারের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”

সাংবাদিক মোজাহিদ জানান,
“ইতিপূর্বে আমার ফেসবুক আইডি দুই দফায় সাসপেন্ড করা হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। আমি এ ঘটনায় নিরপেক্ষ বিভাগীয় তদন্ত চাই। যদি তদন্তে ওসি আব্দুল বারিক ও সংশ্লিষ্ট দুই এসআই দোষী প্রমাণিত হন, তবে তাদের স্থায়ীভাবে বরখাস্তসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

অন্যদিকে, শ্রীপুর থানার ওসি আব্দুল বারিক, এসআই নাজমুল ও এসআই মনোয়ার আইডি হ্যাকের অভিযোগের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তারা নিজেদের সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে বলেন, বিষয়টি তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হচ্ছে।