গাজীপুরের শ্রীপুরে রিসোর্টের ভেতর ছাগল প্রবেশ করার অপরাধে ছাগল মালিকের সামনে ছাগলকে গুলি করে হত্যা করলো রিসোর্ট কতৃপক্ষ। এয়ার গান দিয়ে গুলি করার বিষয়টি স্বীকার করেছে রিসোর্সের ব্যবস্থাপক। অসহায় কৃষাণী মৃত ছাগল ও ছোট্ট একটি ছাগলের বাচ্চা নিয়ে থানায় এসেছেন বিচার চাইতে। দিয়েছেন লিখিত অভিযোগ।
গত ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের ফাউগান গ্রামের জলেশ্বরী রিসোর্টে ওই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী কৃষাণী রিয়া আক্তার উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের ফাউগান গ্রামের আল আমিনের স্ত্রী।অভিযুক্ত আমান উল্লাহ একই ইউনিয়নের আসমত আলী মুন্সির ছেলে। তিনি জলেশ্বরী রিসোর্টের একজন কমচারী।
ভুক্তভোগী কৃষাণী রিয়া আক্তার অভিযোগ করে বলেন, জলেশ্বরী রিসোর্ট ঘেঁষে আমাদের জমিতে নিয়মিত ছাগল বেঁধে ঘাস খাওয়ানো হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে আমার দুটি এবং আমার ভাসুরের দুটি ছাগল খেতের আইলে বেঁধে বাড়িতে আসি। এরপর রশি ছিড়ে আমার ছাগল রিসোর্টে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর ছাগলের ডাক চিৎকার শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আমার ছাগলকে গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করছে। আমি দূর থেকে পায়ে ধরে শেষ বারের মতো ক্ষমা চাই এই বলে আমার ছাগলকে গুলি করবেন না ভাই। তাতেও সে শুনেনি। বন্দুক তাক করে আমার ছাগলের বুকে গুলি চালায়। এরপর একটি ছাগলের বাচ্চা বন্দুক দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেও আমার ছাগলেকে ছাড়েনি। এরপর আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানিয়ে থানায় যায়। তিনি আরও জানান, আমরা গরিব মানুষ আমার স্বামী অটোরিকশা চালায়, আর আমি ছাগল লালন-পালন করে সংসার চালায়।
ভুক্তভোগী কৃষাণীর শ্বশুর আব্দুল আহাদ বলেন, ঘটনা শুনার পরপরই আমি দৌড়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এরপর অভিযুক্ত আমান উল্লাহ আমাকে গাঢ় ধাক্কা দিয়ে বলে এই ছাগল নিয়ে চলে যাও। জবাই করে মাংস খাও। এরপর আমরা নিরুপায় হয়ে ওখান থেকে চলে আসি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, এই রিসোর্টের লোকজনের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। ওঁরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নিরীহ কৃষকের ছাগলের বুকে গুলি চালাতেও দ্বিধাবোধ করে না।
জলেশ্বরী রিসোর্টের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এঁরা দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ সমস্যা করছে। এঁদেরকে বহুবার নিষেধ করেছি। তবুও তাদের কোন হুশ হয়নি। হুশ করিয়ে দিতে সামান্য খুঁচা দেয়া হয়েছে। তবে এয়ার গানের গুলিতে ছাগল মারা যাওয়ার কথা না। আমি রিসোর্টে থাকলে বিষয়টি এতদূর গড়াত না। তারপরও ছাগল মালিকের সঙ্গে আপোষ মহিমায় করার চেষ্টা করবো। ওঁরা অভিযোগ করেছে আপনার রিসোর্টে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, আপনি চলেন দেখবেন এখানে একটি এয়ার গান ছাড়া কিছু নেই।
প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরুল হক আকন্দ বলেন, ভুক্তভোগী কৃষাণী বিষয়টি আমার অবহিত করছেন যে রিসোর্ট কতৃপক্ষ তার ছাগলকে গুলি করে হত্যা করছে। যেহেতু গুলি করে হত্যা আমি সঙ্গে সঙ্গে তাদের আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক এসআই আবু রায়হান বলেন, আজ শনিবার বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সত্যাতা পাওয়া গেছে। এবিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী আইগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।