শ্রদ্ধায় স্মরণ কলঙ্কময় ও বেদনাবিধুর দিন

শোক আর শ্রদ্ধায় জাতীয় চার নেতা হত্যা দিবস স্মরণ করছে বাংলাদেশ। সাতচল্লিশ বছর আগে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর তার ঘনিষ্ঠ এই চার সহকর্মীকে কারাগারে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৩ নভেম্বর কলঙ্কময় ও বেদনাবিধুর একটি দিন। রাষ্ট্রের হেফাজতে জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার দিনটি ‘জেল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সকালে ধানমণ্ডিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং বনানীতে জাতীয় চার নেতার তিনজন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধি রয়েছে রাজশাহীতে। একই সময়ে রাজশাহীতে এ এইচ এম কামারুজ্জামানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

দিনটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। উত্তোলন করা হবে কালো পতাকা।

প্রথমে সরকারপ্রধান হিসেবে একা, পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলীয় নেতাদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি কিছুসময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।

ধানমণ্ডি থেকে বনানী কবরস্থানে যান প্রধানমন্ত্রী। ১৫ অগাস্ট নির্মম হত্য্যার শিকার বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় নেতাদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি ফুলের পাপাড়ি ছড়িয়ে দেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বনানী থেকে চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয় জাতীয় নেতাদের স্মৃতির প্রতি।

বনানীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবু-উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল আওয়াল শামীম, পারভীন জামান কল্পনাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ধানমণ্ডিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “পনেরই আগস্ট একটা পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য এবং তেশরা নভেম্বর জেলের অভ্যন্তরে যে হত্যাকাণ্ড, সেটা আসলে ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা, একই সূত্রে গাঁথা। তেশরা নভেম্বর আমাদের জাতীয় চার নেতা, তাদের নিষ্ঠুরভাবে কারা অভ্যন্তরে হত্যা করা হয়। এই হত্যার রাজনীতির ধারায় ২০০৪ সালের একুশে অগাস্ট হত্যাকাণ্ড।”

কাদের বলেন, আসলেই বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতির হোতা বিএনপি। বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা ও ২১ অগাস্ট হত্যাকাণ্ড তাদেরই কাজ।

হত্যার রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকের দিনে রাজনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে হলে এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের পথে আমরা আমাদের যে চেতনাকে লালন করি, সেজন্য চিরতরে হত্যা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

যেখানে চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল, ঢাকার সেই পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর। সকালে সেখানে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বিকাল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা হবে। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।