রাত পোহালেই গাজীপুর সিটির ভোট

রাত পোহালেই ভোটের আসর বসছে গাজীপুরে। প্রায় ১২ লাখ ভোটারের এই সিটি করপোরেশন আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি। এই সিটির ভোট দিয়েই নির্বাচন কমিশনের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।

ইতোমধ্যে ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ভোটের সামগ্রী। বুধবার সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিকট ইভিএমসহ বিভিন্ন নির্বাচনি সামগ্রী বুঝিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে; ইভিএম, অমোছনীয় কালি, ভোটার তালিকা, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ভেসলিন, মখমলের কাপড়, টিস্যু পেপার, বুথ কক্ষ নির্মাণের জন্য কাপড়, স্ক্রু-ড্রাইভার, মাল্টিপ্লাগসহ ৪৬ ধরনের সামগ্রী।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনকে অনেকে ইসি’র জন্য এসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন। নির্বাচন কমিশনও বলেছে, সিটির ভোট সুষ্ঠু করে তারা পরীক্ষা দিতে চায়। যদিও গাজীপুরসহ অন্য সিটির ভোটে প্রধান বিরোধী জোট বিএনপি ও সমমনা দল অংশ নিচ্ছে না। এ কারণে ভোটের মাঠে বড় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে না। দৃশ্যত বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও এ সিটির ভোট আসছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য বড় বার্তা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সিটির ভোটকে বিরোধী দলগুলোকে নতুন ইস্যু হিসেবে নিতে পারে। এ ছাড়া দেশে-বিদেশের দৃষ্টি রয়েছে এ নির্বাচনে।

সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী আটজন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান এবং সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের মধ্যে। এ নির্বাচনে আজমত উল্লা খান দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ এবং জায়েদা খাতুন ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৪৬ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮০টি এবং ভোটকক্ষ ৩৪৯৭টি। মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২, নারী ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮ জন। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১০ হাজার ৯৭০ জন। প্রিসাইডিং অফিসার ৪৮০, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৩৪৯৭ এবং পোলিং অফিসার ৬৯৯৪ জন।

এবারে নির্বাচন পরিস্থিতি দেখতে গাজীপুরে বসানো হয়েছে মোট ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসি ক্যামেরা। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বড় পর্দায় ভোটের পরিস্থিতি দেখবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকেরা।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রসমূহের নিরাপত্তা বিধানকল্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রসমূহে অস্ত্রসহ এক জন এসআই অথবা এএসআই ও চার জন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ এক জন অঙ্গীভূত আনসার পিসি, এক জন অস্ত্রসহ আনসার এপিসি, লাঠিসহ চার জন মহিলা ও ছয় জন পুরুষ আনসার/ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৭ জন মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রসমূহে অস্ত্রসহ এক জন এসআই অথবা এএসআই ও তিন জন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ এক জন অঙ্গীভূত আনসার পিসি, এক জন অস্ত্রসহ এপিসি, লাঠিসহ চার জন মহিলা ও ৬ জন পুরুষ আনসার/ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৬ জন মোতায়েন থাকবে।

নির্বাচনি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র‍্যাব দায়িত্ব পালন করবে। এরমধ্যে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে একটি করে মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রতিটি থানা এলাকায় একটি করে মোট আটটি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোট ৩০টি র‍্যাবের টিম থাকবে। নগরীর পাঁচটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ১৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। নির্বাচনি মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও আছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬-১৭ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, জীপুর সিটি নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প এলাকায় কোথাও কোথাও অপরাধ প্রবণতা বেশি থাকে। এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো- ৩৫১টি কেন্দ্র (দুই-তৃতীয়াংশের বেশি), আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় কোনো অনিয়ম দেখতে পেলে গাইবান্ধা নির্বাচনের চেয়েও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেয়র প্রার্থীরা কে, কোথায় ভোট দেবেন:

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আজমত উল্লা খান টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার টঙ্গী দারুস সালাম মাদ্রাসা, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন টঙ্গী কলেজ রোড এলাকার নিউ ব্লুন হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দিবেন।

হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান টঙ্গীর এরশাদ নগরের চাংকির টেক এলাকার হাজী আলমাছ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ এরশাদ নগরের চাংকির টেক এলাকার হাজী আলমাছ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম নলজানির বাড়িআলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন বলে তারা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন নগরীর কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম রনি টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হাসপাতাল, ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ উত্তর খাইলকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।