আজ সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই দুই সিটির ভোটে নেই মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। গত ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন অংশ নিলেও সিলেট ও রাজশাহীর ভোট দলটি বর্জন করায় শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় নির্বাচনী উত্তাপ নেই বললেই চলে। তবে দুই সিটির ব্যালট পেপারে ইসলামী আন্দোলন প্রাথীর প্রতীক হাতপাখা’ থেকে যাবে। সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন চলবে। তবে ভোটে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বৈরী আবহাওয়া। ভারী বৃষ্টি হলে একাধিক ভোটকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়তে পারে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নির্বাচনী প্রচারণাও ব্যাহত হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (২০ জুন ) সকালে ১৯০টি কেন্দ্রে ভোটের সামগ্রী পৌঁছানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে তা কিছুটা দেরি হয়। দুপুরে নগরীর আবুল মাল আব্দুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠে ভোটের সরঞ্জাম বিতরণ করে নির্বাচন কমিশন। সব কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছাতে গভীর রাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সাল কাদির বলেছেন, ভোটের সামগ্রী কেন্দ্র পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঠিক সময়েই তা সব কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও আর্মড পুলিশ থাকবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিফ আহমেদ বলেন, পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত বর্ষণের ফলে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। সুরমা কানাইঘাট পয়েন্টে পানি কমলেও মঙ্গলবার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার কুশিয়ারা নদীর সব পয়েন্টে পানি বেড়েছে ও সুরমার দুটি পয়েন্টেই পানি কমেছে।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধির কারণে নগরীর নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে পানি উঠার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি চলতে থাকলে জলাবদ্ধতাও তৈরি হতে পারে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডসহ ৪২টি ওয়ার্ডে ১৯০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। এবারে ভোটার চার লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠে আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য, ৫১টি মোবাইল টিম, ১৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ছয়টি রিজার্ভ ফোর্স থাকবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার ইলিয়াছ শরীফ বলেন, সিটি নির্বাচনে তাদের স্পেশাল টিম মাঠে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জয়ের ব্যাপারে সিলেটে আওয়ামী লীগ নেতা নির্ভার মনে হলে কিছুটা অস্বস্তিও রয়েছে বলে জানা গেছে। কারণ সিলেটে মাঠে ময়দানে থানা নেতাদের কাউকে মনোনয়ন না দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভ যদি গাজীপুরের মতো ফুসে উঠে বিপদ ঘটাতে পারে। কারণ ২০১৩ ও ২০১৮ সিটি নির্বাচনে বদরুদ্দিন কামরানকে দলীয় বিভক্তিই হারিয়েছিল। এবার সে বিষয়টি মাথায় রেখে শুরু থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সার্বক্ষণিকভাবে দেখা যাচ্ছে। নেতৃবৃন্দ পালা করে সেখানে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। বিবাদমান নেতাকর্মীদেরকে আনোয়ারুজ্জামানে পক্ষে মাঠে নামিয়েছেন।
রাজশাহী সিটি নির্বাচন
গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। এবারই প্রথম এই সিটির সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।
এবার রাসিকে ১৫৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রের ভোটকক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ১৫৩টি। প্রতিটি কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রতিটি ভোটকক্ষে থাকবে সিসি ক্যামেরা। যার মাধ্যমে ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশনাররা ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। নিরপেক্ষ ও শান্তিপ‚র্ণ নির্বাচনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নগরীতে মোতায়েন করা হয়েছে র্যাব ও বিজিবি। এ ছাড়া মাঠে থাকবেন ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। এখন অপেক্ষা শুধু ভোটের।
কেন্দ্রে যাচ্ছে ইভিএম
ভোটের জন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। নগরীর নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে বেলা ১১টায় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা এসব সরঞ্জাম কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে নির্বাচন ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। মাঠে নেমেছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি।
ভোটকেন্দ্র
রাসিক নির্বাচনে এবার মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৫টি। কেন্দ্রগুলোতে ভোটকক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ১৫৩টি এবং অস্থায়ী কেন্দ্রে ভোটকক্ষের সংখ্যা ১৬২টি। একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার পাশাপাশি ১০ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজ করছেন। ভোটকেন্দ্রে থাকবে ৩ হাজার ৬১৪ জন কর্মকর্তা। ১৫৫টি কেন্দ্রের প্রতিটির বাইরে সিসি ক্যামেরা থাকবে তিন থেকে পাঁচটি। এ ছাড়া ১ হাজার ১৫৩টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে থাকবে একটি করে সিসি ক্যামেরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে, ভোটগ্রহণের জন্য ১ হাজার ৮০০টি ইভিএম প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ইভিএম টেকনিশিয়ান থাকবেন।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ সিটিতে মোট জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৯১ জন। মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩০টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১০টি। এ নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭, নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৬ জন।
প্রার্থী
রাসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন মেয়রপ্রার্থী, ১১২ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৪৬ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলদের মধ্যে ২০ নং ওয়ার্ডে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এবার নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পাটির সাইফুল ইসলাম স্বপন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুরশিদ আলম ফারুকী ও জাকের পাটির অ্যাডভোকেট লতিফ আনোয়ার সুপ্ত।
মেয়রপ্রার্থীরা কে কোথায় ভোট দেবেন
আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নগরীর উপশহর টাউন স্কুলে ভোট দেবেন। নগরীর মথুরডাঙার কোনো এক কেন্দ্রে ভোট দেবেন জাতীয় পাটির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং মুসলিম স্কুলে ভোট দেবেন জাকের পাটির লতিফ আনোয়ার সুপ্ত। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরশিদ আলম ফারুকী নির্বাচন বয়কট করায় তিনি ভোট দিতে যাবেন না বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সকাল ৯টায় র্যাব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন র্যাব-৫-এর অধিনায়ক রিয়াজ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ’নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু ও শান্তিপ‚র্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে র্যাব বদ্ধপরিকর। বুধবার ভোর ৬টা থেকে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি উপস্থিত থাকবে র্যাব। র্যাবের ডিএডি অফিসারসহ প্রায় ৩০০ জন সদস্য মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স, সাদা পোশাকের গোয়েন্দা এবং বোমা নিষ্ক্রিয়কারী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করবেন। র্যাব-৫-এর ১৫টি মোবাইল স্ট্রাইকিং প্যাট্রোল, স্ট্রাইকিং ফোর্স কমান্ডারসহ সুপার মোবাইল মোটরসাইকেল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া র্যাব সদর দপ্তরে স্পেশাল ফোর্স হেলিকপ্টারে প্রস্তুত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ’১০ জুন থেকে র্যাব মাঠে কাজ করছে। নির্দেশনা অনুসারে ২২ জুন রাত পর্যন্ত র্যাবের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন নির্বাচনে দায়িত্বরতদের উদ্দেশে বলেন, ’আগে তিনটি ব্যালটের মধ্যে যেকোনোটা না দিয়ে ভোটার চলে যেত, তবে এবার সবগুলো ব্যালট ইউনিটে ভোট না দিলে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে আনসার সদস্যরা যেন সজাগ থাকে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে সাত স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএমসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিতে যাতে কারও ভুল না হয়, সেজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।