বর্তমানে বাংলাদেশে যেকোনো পণ্য সরবরাহ জনিত কোনো সংকট নেই। এরপরও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রমজানকে সামনে রেখে বাড়তি মুনাফা পেতে প্রতিবছরের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ। ডলার সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। যার ফলে গড় ৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করতে চায় সরকার। মূলত ভর্তুকি কমিয়ে আনতেই সরকারের এই উদ্যোগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সবচেয়ে কম মান ২০০ ইউনিট পর্যন্ত যারা ব্যবহার করেন সেইসব লাইফ লাইন গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি বাড়বে ৩৫ পয়সার মতো। যারা আরও বেশি ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে দামও বাড়বে বেশি।
দুই সপ্তাহ ধরে অস্থির হওয়া মুরগির বাজারেও গত সপ্তাহে দাম আরেক দফা বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছের দাম। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি- সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়তি, যোগান বাড়লে দাম কমবে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা। যা গত দুই সপ্তাহ ধরে ছিল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা। আর আগের মতো চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা। স্থিতিতে রয়েছে ডিমের বাজার। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করছে ১৩৫ টাকায়।
এভাবে বাড়ানো হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। দাম বাড়ানোর এই প্রবণতা আগামী ১১ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া পবিত্র রমজানে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে রোজার মাসে বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে। গত বছরের জানুয়ারিতে চিনির দাম প্রতি কেজি ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা বেড়ে ১৪০-১৪৫ টাকায় দাঁড়ায়। গত বছর রমজানের প্রথম দিন অর্থাৎ ২৪ মার্চ এর দাম ১১৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অসাধু আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারেও তাদের পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আমদানি আদেশের তথ্য অনুযায়ী, অনেক ক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে পণ্য সরবরাহের আগেই অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়ায়।
আমরা মনে করি, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের এ ধরনের অসাধু কর্মকাণ্ড দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে এর প্রভাব দৃশ্যমান হয় না। মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী পণ্য আমদানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকায় আমদানি বাজারেও প্রতিযোগিতার অভাব রয়েছে। ফলে আমদানি পণ্যের দাম তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। আসলে প্রতিযোগিতা কম থাকায় তারা অবৈধভাবে মুনাফা অর্জনের জন্য নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। এই প্রবণতা বন্ধ করা দরকার। সারা বছর ক্রেতারা অসৎ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।