যেখানে-সেখানে গাছ লাগালে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ধরনের পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে, ‘দেশে এক কোটি গাছ লাগিয়ে একটা বিশ্বরেকর্ড করা যায় না?’ কিন্তু ভুল পদ্ধতি উপকার করতে চাওয়া আরও বেশি ক্ষতির কারণ। গাছ লাগানোই চূড়ান্ত সঠিক কাজ ভেবে মানবজাতি গত ২০-৩০ বছরে পৃথিবী অনেক ধ্বংস করেছে। না বুঝে গাছ লাগালে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি।

কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরছি-

১. বনভূমি ধ্বংস করে বাংলাদেশের অত্যন্ত যোগ্য বনবিভাগ ইউক্যালিপ্টাস মেহগনির মত বিদেশি গাছের মনোকালচার করে মূলত গাছের মরুভূমি সৃষ্টি করে। চিনের গোবি মরুভূমিতে চায়না বিশাল বাজেটে ম্যাপল/পাইন গাছ লাগিয়েছিল, সেগুলো মরুভূমিকে তো সহযোগিতা করেইনি, বরং সঠিক বৃক্ষরোপণে স্থায়ী প্রতিকূলতা সৃষ্টি করেছে। দুটি কারণ : ক. উক্ত অঞ্চলের দেশীয় গাছ না লাগানোর ফলে তা ইকোসিস্টেমের অংশ হয় না। খ. ইকোসিস্টেমের অংশ না হওয়ায় পশুপাখি উক্ত গাছপালা থেকে খাবার পায় না এবং বীজও ছড়ায় না।

সমাধান: মনোকালচার করা যাবে না, অঞ্চলভেদে সঠিক গাছ লাগাতে হবে এবং সঠিক মিশ্রণে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগাতে হবে, যা উক্ত অঞ্চলের ইকোসিস্টেম, বায়োটিক এবং এবায়োটিক এলিমেন্টের সাথে পজিটিভলি ইন্টারেক্ট করবে।

২. গাছ লাগিয়ে পৃথিবীকে কখনোই উদ্ধার করা যাবে না এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত এবং মানুষের অবধারিত অদক্ষতায় পরিলক্ষিত। মূলত বৃদ্ধি করতে হবে বনভূমি বা ইকোসিস্টেম। কিন্তু গাছ লাগানো ও বনভূমি সৃষ্টি করতে যে পরিমাণ এফোর্ট দেওয়া হয়, তারচেয়ে বনভূমি রক্ষা করা অধিকতর জরুরী। কারণ, বনভূমি নিজেই নিজেকে বিস্তার করে। কৃত্রিমভাবে আমরা যেটা করি সেটাকে কৃষি বলে এবং কৃষি সারা পৃথিবীর ২৬% গ্রিন হাউজ এমিশনের জন্য দায়ী। এর মাঝে শুধু গরু নয়, ৮% গ্রিনহাউজ এমিশন উদ্ভিদজাত কৃষি থেকেই আসে। সমাধান: স্লোগানটা হতে হবে, ‘প্রকৃতি বাঁচান’

৩. গাছ যদি ভুল জায়গায় লাগানো হয় তাহলেও ক্ষতির কারণ হবে। যেমন, বিদেশী গাছ উপকারী দেশীয় গাছের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে, প্রায়শই রহাধংরাব আচরণে ইকোসিস্টেম স্থায়ীভাবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে রূপান্তর হয়।

উদাহরণ-১: আমাদের দেশে ঝঁপশবৎসড়ঁঃয ভরংয যা করছে আমাদের রুইকাতলা (ঈধৎঢ়ং) জাতীয় মাছসমূহ আমেরিকার নদীসমূহে একইভাবে ধ্বংসযজ্ঞ করছে।
উদাহরণ-২: মেরু অঞ্চলে এবং সমতল তৃণভূমিতে যদি গাছ লাগানো হয়, তাহলে তা উক্ত অঞ্চলের উষ্ণতা বাড়াবে। মেরু অঞ্চলের বরফ মূলত আয়নার মতো আলো প্রতিফলন করে। সেখানে যদি গাছ লাগানো হয়, তবে গাছের গারো অপ্রতিফলী রঙ তাপ শোষণ করে। অন্যদিকে তৃণভূমিতে তৃণভোজীদের বিচরণে ও খাদ্য গ্রহণে ক্রমাগত তৃণকে মাটির সারে রূপান্তর করে উক্ত তৃণমালাকে পুনরায় গ্রোথ স্টেজ শুরু করে, এতে যে হারে কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন হয়, গাছ লাগালে তা এক সময় তুলনামূলকভাবে ধীর হয়ে যায়।

সমাধান: না বুঝে গাছ লাগানো যাবে না।

লেখক : শিক্ষার্থী, এনআইটিআর