মিছিল-স্লোগানে মুখরিত রংপুর

দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর আজ রংপুর আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে প্রধানমন্ত্রী রংপুর সার্কিট হাউসে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনসহ রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বিভাগীয় জনসমাবেশে যোগ দেবেন।

বুধবার (২ আগস্ট) সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জেলা স্কুল মাঠের দিকে আসছে। জেলা ও বিভাগী লাখ লাখ মানুষ বিভাগীয় মহাসমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য আসছেন। তাদের হাতে রয়েছে পতাকা। মিছিল থেকে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে-গেয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম বলে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।

লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আসছেন দলে দলে। বাস, ট্রেন, মাইক্রো বাস, পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশা ও সিএনজি করে আসছেন তারা। অনেকে আসছেন হেঁটেও।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রংপুর মহানগরী। রংপুর মহানগরীর ২১টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশ রুট গুলোতে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে জনসভায় আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জিলা স্কুল মাঠে এসএসএফসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন সর্বোচ্চ সতর্কতায়। মাঠের দক্ষিণ পশ্চিম কোণায় নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে সভামঞ্চ। পাশেই মিডিয়া, মুক্তিযোদ্ধা ও অতিথি কর্নার। সামনে থাকবে জনতা। প্রস্তুতির কাজ তদারকি করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

জিলা স্কুল মাঠের জনসভায় থেকেই নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমনটা জানিয়েছেন নেতারা।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে সভা সমাবেশ করা হয়েছে। গ্রামেগঞ্জে শহরে বন্দরে খণ্ড খণ্ড মিছিল করা হয়েছে। পুরো বিভাগজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালানো হয়েছে। বিগত সময়ের উন্নয়নগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। মানুষ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত। তারা জনসভায় যোগ দিতে অপেক্ষা করছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, জনসভাকে ঘিরে সব ধরণের নিরাপত্বার বন্দোবস্ত করেছি আমরা। পুলিশের পাশাপাশি আর্মডসহ সাদা পোশাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। জনসভাস্থল ছাড়াও থাকবে পথে পথে রুট ডিউটি, থাকবে চেকপোস্ট, পুরো নগরীর গুরুত্বপূর্ন প্রবেশ পথ ও মোড়ে মোড়ে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উঁচু ভবনের ছাদে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে থাকবে প্রশিক্ষিত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

রংপুর জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জেলা সফর করবেন। তিনি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বিশাল জনসভা থেকে প্রায় ১২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৭ তলাবিশিষ্ট ক্যানাসার হাসপাতাল নির্মাণ, র‌্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি অবকাঠামো।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পর তিনি আবার রংপুরে আসছেন।

এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। প্রতিশ্রুতির আলোকে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও যোগাযোগব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন রংপুরের পুত্রবধূ বঙ্গবন্ধুকন্যা।

এমএইচএফ