মা হওয়ার পর যে ৭টি অভ্যাস ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

গর্ভাবস্থায় শারীরিক ওজন বেড়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা । অনেকেই ভাবেন বাড়তি ওজন কমানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য । আসলে একটু সচেতন হলেই সন্তান জন্মের পর অল্প সময়ের মধ্যে শরীরকে আবার আগের মতো ফিট রাখা সম্ভব । গর্ভাবস্থায় সন্তানের পুষ্টির জন্য মাকে বেশি পরিমাণে প্রোটিন, শর্করা, চর্বিজাতীয় খাবার খেতে হয় । ফলে এ সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে পেটের নিচের অংশে মেদ জমে যায় । এ সময় মায়ের ওজন স্বাভাবিকভাবে ১১ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত বেড়ে যায় । সন্তান জন্মের সময় ৪ থেকে ৬ কেজি ওজন কমে । বাড়তি ওজন কমতে প্রসবের পর সাধারণত ৬ মাস লেগে যায়। কিন্তু যদি ৬ মাস পরও যদি মেদ না কমে বরং আরো বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই মাকে সচেতন হতে হবে । কারণ এর ফলে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কিংবা হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে । গর্ভাবস্থায় বাড়তি ওজন কমাতে হলে মাত্রাতিরিক্ত ডায়েট করা যাবে না। এতে মা ও সন্তান দুজনেরই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বরং পরিমাণমত ব্যায়াম করতে হবে ও সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে।

চলুন জেনে নিই সন্তান জন্মের পর শরীরের ওজন কমাতে করণীয়-

সন্তানকে স্তনের দুধ খাওয়ানো

জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত শিশু মায়ের বুকের দুধ খায়। সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে মায়ের শরীর থেকে সারাদিনে ২০০ থেকে ৫০০ ক্যালোরি খরচ হয়। শিশু যতবার চায় ততবার তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এটি ওজন কমাতে অত্যন্ত ফলপ্রসূ । তবে এ কারণে মাকে প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে হবে- এমন ধারণা ভুল। ডাক্তারের পরামর্শমতো ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।

পরিমাণমত ব্যায়াম করুন

সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে অনেকে ব্যায়াম করার সময় পান না। যার কারনে ওজন বেড়ে যায়। ব্যায়াম ওজন কমানোর পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি ও যোগায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট হাঁটতে হবে। এরপর প্রতি সপ্তাহে ৫ মিনিট করে হাঁটার সময়টা বাড়ান। স্বাবাভিক প্রসবের অন্তত দেড় মাস পর এবং সিজারিয়ান প্রসবের ২ মাস পর থেকে ব্যায়াম শুরু করতে হবে। ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে।অন্তত ২ থেকে ৩ মাস নিয়মিত ব্যায়াম করলে ওজন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে। ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।

খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখুন

সন্তান জন্মের পর চিকিৎসকের দেওয়া ডায়েট চার্ট মেনে খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খেতে হবে। । সকালে পেটভরে নাস্তা খেলে সারাদিন ক্ষুধা কম লাগবে। দুপুর ও রাতে তুলনামূলক কম খেতে হবে। দুপুর ও রাতের খাবারে শাকসবজি, প্রোটিনজাতীয় খাবার খেতে হবে। সকালে নাস্তার পর দুপুরের খাওয়ার মাঝে ফল খেতে পারেন। বিকেলে হালকা নাস্তা খেতে হবে।

মাসাজ নিন

বিভিন্ন স্পা ও ওয়েলনেস সেন্টারে অথবা বাসাতেও দক্ষ লোককে দিয়ে মাসাজ করিয়ে নিতে পারেন। মাসাজ শরীরের ব্যাথা দূর করে, রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে, মেটাবলিজম বাড়ায়, ক্লান্তি কাটায় এবং শরীরের আগের আকৃতি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ঘুমান

পর্যাপ্ত ঘুম ওজন কমাতে সহায়তা করে। কম ঘুমালে শরীরে ক্লান্তি থেকে যায়। এই ক্লান্তি কাটাতে অনেকে বেশি খেয়ে ফেলেন। যার কারনে ওজন বেড়ে যায়। সন্তান জন্মের পর মাকে খানিকটা সময় বের করে নিতে হবে ঘুমানোর জন্য।

ফাস্ট ফুড ও মিষ্টি বাদ দিন

ফাস্ট ফুড একেবারেই পরিহার করতে হবে। মিষ্টিজাতীয় খাবার একেবারে কম খেতে হবে। আর প্রচুর পানি খেতে হবে। পানি অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। রান্নায় মসলা ও তেল কম দিতে হবে।

ক্রাশ ডায়েট করবেন না

পরিমিত না খেয়ে ডায়েট করা যাবে না। এতে শরীরের চর্বির চেয়ে মাংসপেশি ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুষম খাবার না খেলে পুষ্টির অভাবে মা ও সন্তানের নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ডায়েটে ওজন সাময়িকভাবে কমলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।