মা-ছেলের একসঙ্গে এসএসসি পাস

একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা পাস করলেন মা-ছেলে। ফলাফলে মা লিপি আক্তার হাসি (৪০) পেয়েছেন জিপিএ-৪.৫৪ এবং ছেলে লিয়াকত হোসেন হৃদয় (১৬) পেয়েছে জিপিএ-৫। এমন সাফল্যে সবার প্রশংসায় ভাসছেন মা-ছেলে।

তারা দুজনেই গুরুদাসপুরের নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ছিলেন। ২১-২২ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) অংশ নেন। তারা সিংড়া উপজেলার সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা।

লিপি আক্তার সিংড়ার চামারী ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ফলাফলে মা লিপি আক্তারের চেয়ে এগিয়ে আছেন ছেলে লিয়াকত। লিয়াকত জিপিএ-৫ এবং মা লিপি আক্তার জিপিএ-৪.৫৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছেলে লিয়াকত এবং মা লিপি আক্তার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দেন।

লিপি আক্তার ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি। পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষক হিসাবে তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলার খুকনি গ্রামে। বিয়ের পর স্বামী-সংসার নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল তার। তাদের ঘরে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা লেখাপড়া না জানলেও ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখায় বেশ উৎসাহী ছিলেন।

ইউপি সদস্য লিপি আক্তার বলেন, খুব ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখা করার প্রবল ইচ্ছে ও স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বাবার আর্থিক দীনতায় সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি তার। এজন্য খুব অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে তাকে। ২০০০ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরপরই নাটোরের সিংড়া উপজেলার চামারী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের লোকমান হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর অনুপ্রেরণায় ছেলে লিয়াকতের সঙ্গে স্কুলে ভর্তি হই। পাঁচ বছর আগে স্বামী লোকমান মারা যাওয়ায় চরম অর্থকষ্টের মধ্যে পড়েন। তবুও হাল ছাড়িনি। সন্তানের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। শুক্রবার দুপুর এসএসসি পাসের খবর শুনে আনন্দে চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে। ফল প্রকাশের পর আশপাশের মানুষ দেখতে আসছেন। অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

লিপি আক্তার আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ছোটবেলার ইচ্ছা শেষ পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে পড়াশুনা আর পরীক্ষা দিয়ে পূরণ হল। খুব আনন্দ লাগছে। তবে এই আনন্দ আরও বেশি হতো,যদি স্বামী বেঁচে থাকতেন। তিনিই সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। কারণ তার প্রেরণায় আজ এই অর্জন। আগামীতে সন্তানদের পাশাপাশি তিনিও লেখা পড়া চালিয়ে যেতে চান।

ছেলে লিয়াকত হৃদয় জানায়, বড় বোন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। সে এবং তার মা-ও বিজ্ঞান বিভাগেই লেখাপড়া করেছেন। একসাথে লেখাপড়া করতে গিয়ে মাকে তার বন্ধুর মতোই মনে হয়েছে। সুখ-দুঃখ একসাথে ভাগ করে নিয়েই লেখাপড়া করেছেন তারা। সাফল্যও এসেছে একসাথেই।

নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন মণ্ডল জানান, মা-ছেলে দুজনের এই সাফল্য সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার।

এমএইচএফ