মা কখনও হতাশ হতেন না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মা সবসময় বাবার পাশে থাকতেন। তিনি বাবাকে বলতেন, ‌‌‍‘রাজনীতি করো আপত্তি নেই, কিন্তু পড়াশোনা করো’। আমার দাদাও আব্বাকে বলেছিলেন, ‘যে কাজই করো পড়াশোনাটা করতে হবে’। আমি জানি না আব্বা দুইটা বছর একটানা জেলের বাইরে থেকেছিলেন কি না। কিন্তু মাকে দেখেছি কখনও হতাশ হতেন না। সবসময় তিনি ঘর-সংসারসহ সবকিছু সামাল দিতেন।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বঙ্গমাতা পদক প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট ঘাতকের দল শুধু রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছে আমার মা, ভাই ও তাদের নববধূদের। পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। তাদের ক্ষুধার অন্য যোগাতে পারত না। চিকিৎসা পেত না। তাদের থাকার কোনো ঘর ছিল না। এই বঞ্চিত মানুষগুলোর ভাগ্য গড়ে তোলা, এটাই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ও সাধনা।

সরকারপ্রধান বলেন, আমার মায়ের মুখে কোনো দিন অভাব-অনটনের কথা শুনিনি। তিনি একটা সাহস নিয়ে চলতেন। দলের ভেতরে সমস্যা দেখা দেয়। মওলানা ভাসানী দল ছেড়ে চলে যান। তখন দলের দায়িত্ব নেওয়া জন্য আমার বাবা মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। আম্মা এ ব্যাপারে কোনো দিন অভিযোগ-অনুযোগ করেননি। তিনি হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। সব সময় স্বামীর পাশে থাকতেন। চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জীবনে মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি হঠাৎ আব্বাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং জেলগেটেই আবার গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জেলগেট থেকে সোজা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বাবাসহ ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। সেই সময় ছয়টা মাস অর্থাৎ মামলা চলাকালীন সময়ের আগে আমরা জানতে পারিনি বাবা কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন কি না কিচ্ছু জানতে পারিনি আমরা। সেই জানুয়ারি মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত….আমরা তখনই জানতে পারলাম প্রথম যখন কোর্ট বসে, সেদিন আব্বা যে বেঁচে আছে আমরা দেখলাম। আমার মা কিন্তু ভেঙে পড়েননি, তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বাবার খোঁজ করতে। এমনকি মাকেও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই মামলায় মাকে জড়ানোরও চেষ্টা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৬০ সালে বের হলেন, আবার ‘৬২ সালে গ্রেপ্তার হন, ‘৬৪ সালে আবার গ্রেপ্তার হন, আবার ‘৬৬ সালে। জেলাখানায় মা যখন আব্বার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, তখন বলতেন–তোমার ঘর-সংসার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না, সেটা আমি দেখব। আব্বা কারাগারে থাকলে দলের কাজও তিনি করতেন।

তিনি বলেন, আমার মায়ের অদ্ভুত স্মরণশক্তি ছিল। তিনি যে কথা একবার শুনতেন বা জানতেন তা সবসময় মনে রাখতেন। আমরা মাকে বলতাম, জীবন্ত টেপরেকর্ডার। সবসময় আমাদের বাড়ি গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকত। গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে আমার মা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং নির্দেশনা দিতেন। ৭ জুনের হরতাল সম্পূর্ণ আমার মা সফল করেছেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক। অনুষ্ঠানে চার বিশিষ্ট নারী ও জাতীয় নারী ফুটবল দলকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবপদক-২০২৩’ দেওয়া হয়। চার যে বিশিষ্ট ব্যক্তি এই পদক পেয়েছেন তারা হলেন- রাজনীতিতে সাহারা খাতুন (মরণোত্তর), শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অণিমা মুক্তি গমেজ ও মোছা. নাছিমা জামান ববি, গবেষণায় ড. সেঁজুতি সাহা।

প্রতি বছর আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সর্বোচ্চ পাঁচজনকে জাতীয় পদক ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ পদক দেওয়া হয়।

এমএইচএফ