ভূমিকম্পে ঝুঁকি কমাতে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন জরুরি

গেল শনিবার সকাল ৯ টা ৩৪ মিনিটে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা। এ নিয়ে দৈনিক দেশ বর্তমানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ মাসে দেশে ছোট ও মাঝারি মাত্রার প্রায় ২১টি ভূমিকম্প হয়েছে।

এর ১২টি ভূমিকম্পের মধ্যে ৫ মাত্রার ওপরে মাত্রা ছিল ৩টির। শনিবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। ভূমিকম্পের কারণে রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর কুমিল্লাসহ কিছু কিছু স্থানে কয়েকটি ভবন ও ঘরের ছাদে ফাটল ধরেছে, কোথাও মেঝের টাইলসে ফাটল ধরেছে। এর মধ্যে কুমিল্লার একটি পোশাক কারখানায় ভবন থেকে নিচে নামতে গিয়ে শতাধিক পোশাকশ্রমিকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্র ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে আবাসিক হল থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো এলাকায় ভূকম্পনের জন্য ফল্টলাইনের বড় ভূমিকা থাকে। ভূতত্ত্বের বিশাল খণ্ডকে টেকটনিক প্লেট বলে। আর দুটি টেকটনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট বা চ্যুতি বলা হয়। ফল্টলাইনে দুই প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়।

বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়। এ এলাকায় আছে দুটি টেকটনিক প্লেট। একটা ভারতীয় ও অন্যটি মিয়ানমার টেকটনিক প্লেট। এই প্লেট দুটি পরস্পরকে স্পর্শ করে আছে। সেই দুটি প্লেটে সংঘর্ষের কারণেই এত ভূমিকম্প হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে আমরা দেখছি, এখানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এটা বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার পূর্ব লক্ষণ।

আমাদের দেশে এভাবে ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়াটা বড় বিপদের আশঙ্কা তৈরি করছে। সাধারণত দেড়শ বছরের মধ্যে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমরা এখন এই সাইকেলের মধ্যে আছি। দেড়শ বছর মানে কিন্তু এটা নয়, ঠিক এ সময়ের মধ্যেই ভূমিকম্প হবে। এটা ১৪০ বছরে আবার ১৬০ বছরেও হতে পারে।

ভূমিকম্প আগাম বার্তা দিয়ে আসে না। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষের কিছু করণীয় না থাকলেও, আগাম কিছু সতর্কতা ও দায়িত্ব পালনের ব্যাপার তো আছে। যেমন ভূমিকম্পসহনশীল ভবন নির্মাণ করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি শহরে অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ইমারত নীতিমালা ও ভূমির ধরন না মেনে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মানা হয় না। যেসব ভবন লাল মাটি বা শক্ত মাটির ওপর নির্মিত, সেই সব ভবনের ঝুঁকি কম। অন্যদিকে যেসব ভবন বালু ও নরম মাটিতে করা হয়েছে, সেসব ভবনের ঝুঁকি অনেক বেশি। নির্মম হলেও সত্য ঢাকা এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক ভবন জলাভূমি ভরাট করে বালু ও নরম মাটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সামান্য ভূমিকম্প হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা আছে। তা ছাড়া ঢাকা শহর ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।

২০২১ সালের ১২ অক্টোবর সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছিল, যে বিল্ডিং কোড দেওয়া হয়েছে তা মানলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প-সহনীয় হবে। কিন্তু সেই কোডের কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে?

বড় ঝুঁকি এড়ানোর জন্য রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের ভবনগুলো নতুনভাবে পরীক্ষা করে ডিফল্ট ভবনগুলো ভেঙে ফেলার জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে সতর্ক করার জন্য আগাম পদক্ষেপ নিতে হবে।