হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের মূল্যবান মালামাল চুরির ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে। কিছু সৌভাগ্যবান যাত্রী চুরি যাওয়া মালামাল ফেরত পেলেও বেশির ভাগ পান না। একসাথে ৫৫ কেজি সোনা চুরির ঘটনা ছিল বিস্ময়কর। সর্বশেষ ১৫ অক্টোবর সিঙ্গাপুর প্রবাসী দুই যাত্রীর ব্যাগ থেকে সোনাসহ মূল্যবান মালামাল চুরির ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হয়। কিন্তু দায় এড়াতে বিমান কর্তৃপক্ষ লুকোচুরি করছে।
দৈনিক দেশ বর্তমানের খবরে জানা যায়, বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক জানান, ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যা ছয়টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিঙ্গাপুর থেকে ফ্লাইট (বিজি-৫৮৫) অবতরণ করে। বেল্ট থেকে লাগেজ সংগ্রহের পর চার যাত্রীর মূল্যবান সামগ্রী খোয়া গেছে বলে অভিযোগ করেন। মূলত সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে নিয়মমাফিক চেকিং কাউন্টার, ইমিগ্রেশন ও নিরাপত্তা তল্লাশিতে এই চার যাত্রী থেকে পাঁচটি লাগেজ বহন করছিলেন। পরে বিমানে ওঠার আগ মুহূর্তে লাগেজ পাঁচটির সাইজ বড় ও ওভারওয়েট হওয়ায় তা কেবিন লাগেজ থেকে হোল্ড লাগেজে স্থানান্তরের জন্য যাত্রীদের জানানো হয়। এরপর শাহজালালে অবতরণের পর লাগেজ খোলা অবস্থায় পাওয়া গেছে মর্মে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সদস্যরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানায়। এছাড়া র্যাম্প সিকিউরিটি সদস্যরা বিমান অবতরণের পরে লাগেজ খোলা অবস্থায পাওয়া গেছে বলে জানায়।
জানা গেছে, বিমানবন্দরের কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি কাজটি করেছেন। তবে ওই ব্যক্তির নাম জানাতে পারেননি ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগী এক যাত্রী বলেন, সোনা আমার হাতেই ছিল। তাদের একজন আইসা বলতেছিল, তুই এগুলো নিয়া যাবার পারবি না। আমাগো দিয়া যা। এরপর ওই ব্যক্তি জোর করে আমার হাত থেকে সেসব নিয়ে যান।
আরেক যাত্রী জানান, আমার কাছে ২৯ গ্রাম সোনা ছিল। আরও একটি চেইন মায়ের জন্য কিনেছিলাম। সঙ্গে দুটি মোবাইল ফোনও ছিল। তারা বিমান থেকে নামার প্রায় দুই ঘণ্টা পর একজনের লাগেজ আসে। বিষয়টি তখন সন্দেহ হয়। পরে তারা লাগেজ পেলেও সেটি খোলা ছিল।
বিমানবন্দরের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা চুরির ঘটনার পর এটি সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দরের ভেতরেই কান্নাকাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসে বিমান কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় সিভিল এভিয়েশন ও বিমানের সিকিউরিটি বিভাগ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, এমন কোনো ঘটনাই নাকি ঘটেনি।
বিমানবন্দরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে সোনাসহ মূল্যবান মালামাল চুরির ঘটনা হেলাফেলার বিষয় নয়। যাদের হাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারাই এখানে ভক্ষকের ভূমিকায় নেমেছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সোনা চুরির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত, সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিমানবন্দর কিংবা অন্যান্য বন্দরে কিছু পণ্য উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কৃতিত্ব দাবি করেন। কোন কর্মকর্তার নেতৃত্বে কত বেশি পণ্য বা সোনা উদ্ধার করা হয়েছে, তা সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারও করে থাকেন। কিন্তু তাদের এই উদ্ধার করা পণ্যের আড়ালে কী পরিমাণ পণ্য চুরি হয়ে যায় যায়, সেটা সম্ভবত কখনো জানা যায় না। কিংবা কতজনের মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে সেটাও না।