বিনয়ের সাথে বলছি, এটা সঠিক নয়: আসিফ নজরুল

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হতে পারে সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। একটি টেলিভিশনে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে। তবে এতে অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে। এটি তার প্রাথমিক অনুমান বলেও জানান তিনি। তাঁর এই বক্তব্যের ভিত্তিতে কিছু জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে। এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন আজ শনিবার।

নির্বাচনের সময় নিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া ওই বক্তব্যের ব্যাখায় তিনি বলেছেন, ‘সম্প্রতি একটি টিভি আলোচনায় আমি বলেছি নির্বাচন হয়তো আগামী বছরের মধ্যে সম্ভব হতে পারে, তবে এক্ষেত্রে অনেকগুলো ফ্যাক্টর রয়েছে। সেখানে এসব ফ্যাক্টর পুরোপুরি ব্যাখা করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমাদের সরকারের কথা থেকে সবাই বুঝবেন যে নির্বাচনের জন্য সংস্কার ও রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলা হয়। এগুলোই সেই ফ্যাক্টর।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কারের কথা আমিও অনুষ্ঠানে বলেছি। আরও কিছু ফ্যাক্টর আমি অনুষ্ঠানটিতে ব্যাখা করেছি; যেমন, সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি। এসব ফ্যাক্টর ঠিক থাকলে নির্বাচন হয়তো হতে পারে আগামী বছর। বলেছি এটাও আমার প্রাথমিক অনুমান।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এই শর্তভিত্তিক ধারণা ও অনুমানকে কিছু গণমাধ্যম নির্বাচনের ঘোষণা হিসেবে দেখাচ্ছেন। বিনয়ের সাথে বলছি, এটা সঠিক নয়।’

আসিফ নজরুল আরও বলেন, নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ডিসিশন। এর সময় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঠিক হবে। তিনিই একমাত্র এটা ঘোষণার এখতিয়ার রাখেন।’

চ্যানেল আইয়ের ‘আজকের পত্রিকা’ অনুষ্ঠানে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর ‘নির্বাচন কবে হতে পারে’ এ প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেছিলেন, আমার কাছে মনে হয়, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করাটা হয়তো সম্ভব হতে পারে। অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। এটা প্রাইমারি অ্যাজাম্পসন (প্রাথমিক অনুমান)।

আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের জন্য অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য সার্চ কমিটি লাগবে। সার্চ কমিটি করতে হলে পিএসসির চেয়ারম্যান লাগবে। সেটার নিয়োগ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রথম কাজ হবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। সঠিক ভোটার তালিকা করতে হবে। নির্বাচনের জন্য এসব ধাপ চিন্তা করতে হবে। কিছুদিনের মধ্যে সার্চ কমিটি হবে বলে জানান তিনি। এরপর নির্বাচন কমিশন গঠন হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আপনি নিশ্চয় ভুয়া নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচন করা হোক, সেটা চান না। নিশ্চয় কেউ চায়নি হাবিবুল আউয়াল কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেবে। এটা কেউ কল্পনাও করতে পারে না।

আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর প্রথম কাজ হবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। ফ্যাসিস্ট সরকার ২০২৪ সালের ভুয়া নির্বাচনের ভোটার তালিকা নিয়ে ব্যাপক অরাজকতা করেছিল। হয়তো ভয় ছিল, নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে কী অবস্থা হবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মতিউর রহমান চৌধুরীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন আইন উপদেষ্টা, আপনারা অনুসন্ধান করুন, ২০২৪ সালের ভোটার তালিকার নামে কী করা হয়েছিল। সুতরাং ভোটের আগে একটি সুষ্ঠু ভোটার তালিকা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ছাড়া এই ভোটার তালিকা তৈরির আদেশ কেউ দিতে পারে না। প্রধান উপদেষ্টার আদেশে ভোটার তালিকা হবে না। নির্বাচন কমিশনের আদেশে হবে।

ওই অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, দ্রব্যমূল্য নিয়েও কথা বলেন আসিফ নজরুল।

তিনি সবচেয়ে ক্ষমতাধর উপদেষ্টা—এমন ধারণার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আসিফ নজরুল বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল প্রচার এবং উপদেষ্টা পরিষদের অন্য উপদেষ্টাদের মতো তাঁরও একই সমান ক্ষমতা। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র নেতাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করেন এবং এটি যৌক্তিকভাবে সম্পন্ন হয়।