নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ পোশাক কারখানা হিসেবে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিক লীগ সভাপতি আব্দুস সামাদ বেপারী ১ বছর আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের জিম্মি করে এই কাজ করেন।
বিগত দিনে শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করতে না পারলেও ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের তোপের মুখে প্রধান শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের এক বৈঠকে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ থেকে পোশাক কারখানা অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় মিজিমিজি রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিত্ব মরহুম রেকমত আলীর ৪৪ ও ইদ্রিছ আলীর ১৭সহ মোট ৬১ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের বেশি জমি রেকমত আলী দান করায় এর নামকরণ করা হয় মিজমিজি পাইনাদী রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়। রেকমত আলীর নাতি আব্দুর রহিম প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পরে ২০১৭ সালে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক দফা পরিবর্তনের পর বিদ্যালয়টির সর্বশেষ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান।
৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তার দায়িত্বের সময় এক বছর আগে মজিবুর রহমান এবং সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ বেপারী জনৈক কামালকে বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষ পোশাক কারখানার জন্য ১০ হাজার টাকার মাসিক ভাড়ার মৌখিক চুক্তিতে ভাড়া দেন। তবে ভাড়ার এ টাকা কখনো স্কুল তহবিলে জমা হতো না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতার কারণে বিগত দিনগুলোতে শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে না পারলেও সম্প্রতি তারা এ নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম জুয়েলসহ শিক্ষার্থীরা আলোচনায় বসে। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পোশাক কারখানার ভাড়ার বকেয়া ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করে সেটি সরিয়ে নিতে সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ দিন। ১৫ দিনের মধ্যে শ্রেণিকক্ষ থেকে এ পোশাক কারখানা অপসারণ করে দেবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দেশ বর্তমান কে জানান, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা ১৫ দিনের মধ্যে পোশাক কারখানা সরিয়ে নিতে ভাড়াটিয়া কামালকে নির্দেশ দিয়েছি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন দেশ বর্তমান কে বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী স্যার এটা সমাধান করে দিয়েছেন।
আলোচনায় বসা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাক এমএ হালিম জুয়েল বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আজ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসি। কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে শ্রেণিকক্ষ থেকে পোশাক কারখানাটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সম্মত হয়েছে।