বিএনপির পদযাত্রা ও আ.লীগের শোভাযাত্রা ঘিরে সতর্ক পুলিশ

রাজধানীতে এক দফা দাবি আদায়ে পদযাত্রা করবে বিএনপি। একই দিন শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জনসাধারণ ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিত টহল কার্যক্রমও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের একাধিক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, সকালে বিএনপির শুরু হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ আছে। দুটি দলেরই নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব কর্মসূচিতে পোশাক ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন সিভিলে ডিউটি করবে। তারা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। কর্মসূচিতে যদি কেউ নাশকতার চেষ্টা করে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জান গেছে, গত ছয় মাসের ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবারও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি পদযাত্রা করবে। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করবে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আজ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার গাবতলী থেকে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে।

গাবতলী-টেকনিক্যাল মোড়-মিরপুর ১-মিরপুর ১০ গোল চত্বর-কাজীপাড়া শেওড়াপাড়া-তালতলা (আগারগাঁও) বিজয় সরণি-কাওরানবাজার-এফডিসি-মগবাজার-মালিবাগ-কাকরাইল-নয়াপল্টন পার্টি অফিস-ফকিরাপুল-মতিঝিল (শাপলা চত্বর)-ইত্তেফাক মোড়-দয়াগঞ্জ রায়সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে।

এদিন একই কর্মসূচি থাকবে জেলা ও মহানগরেও। একই সময় বুধবার রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা করবে দলটি। আব্দুল্লাহপুর-বিমানবন্দর-কুড়িল বিশ্বরোড-নতুন বাজার-বাড্ডা-রামপুরা ব্রিজ-আবুল হোটেল-খিলগাঁও বাসাবো-মুগদাপাড়া-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী (চৌরাস্তা) গিয়ে শেষ হবে। পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে অংশ নিতে আহবান জানিয়েছে বিএনপি।

এদিকে রাজধানী ঢাকায়ও বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজনে রাজধানীতে কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আজ (মঙ্গলবার) বিকেল ৩টায় ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ পালন করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বুধবারের কর্মসূচি ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে শুরুতেই নমনীয়তা দেখানোর পাশাপাশি সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করা হবে। তবে সেক্ষেত্রে যদি জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করা হয় তাহলে কঠোর অ্যাকশনে যাবে পুলিশ।

নিয়মিত পুলিশিং-এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ হাজার রিজার্ভ ফোর্স মাঠে নামানো হবে। একই সঙ্গে সমাবেশে বিশৃঙ্খলাকারীদের চিহ্নিত করতে সাদা পোশাকে ক্যামেরা হাতে কাজ করবে পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যরা। সেখান থেকে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

ডিএমপির অপরাধ বিভাগের একজন ডিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে তারা যথেষ্ট চাপে রয়েছে। কেননা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের সমাবেশ শেষে ধানমন্ডি পর্যন্ত র‍্যালি করবে। এজন্য তারা এক লাখ মানুষের জমায়েত করার টার্গেট নিয়েছে। একই দিনে বিএনপির পক্ষ থেকে গাবতলী থেকে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত পদযাত্রা করা হবে। সেখানে বড় শো-ডাউনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এতে যানজটের শংকাও রয়েছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করছে না কোনো দলই।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, গাবতলী, মিরপুর, নয়াপল্টন, মতিঝিল, কাকরাইলের নাইট অ্যাঙ্গেল ক্রসিং, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা ও দয়াগঞ্জের চারপাশসহ নগরীর প্রায় তিনডজন পয়েন্টে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্পর্শকাতর স্পটে মোতায়েন থাকবে গোয়েন্দা ওয়াচম্যান এবং ডিবির ভিডিও ও স্টিল ক্যামেরাম্যানরা। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ছবি, ভিডিও ফুটেজ এবং তথ্য সংগ্রহ করবে তারা। যাতে এসব ঘটনায় জড়িতদের পরবর্তীতে সহজেই শনাক্ত করা যায়।

এমএইচএফ