সঠিক নিয়মে হিজাব পরিধান না করে বাইরে আসায় ইরানের নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ২২ বছর বয়সী কুর্দী তরুণী মাহসা আমিনি। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। এ মৃত্যুতে ইরানজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ লাগে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর তাণ্ডবে চার শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয় বলে দাবি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর। তবে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নিহতের সংখ্যা ২ শতাধিক।
বিক্ষোভকারীদের প্রতি ইরানের এই নৃশংস আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয় আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। অবশেষে বাতিল হলো দেশটির নীতি পুলিশ। দেশটির স্থানীয় মিডিয়া রোববার (৪ ডিসেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, ‘বিচার বিভাগের সঙ্গে নৈতিকতা পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।’

এক ধর্মীয় সম্মেলনে ‘কেন নীতি পুলিশ বন্ধ করা হচ্ছে’ জানতে চাইলে মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে গাশত-ই এরশাদ বা ‘গাইডেন্স পেট্রোল’ নামে পরিচিত ইরানের নীতি পুলিশ কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এর অধীনে ‘শালীনতা এবং হিজাবের সংস্কৃতি’ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারা ইরানের মহিলাদের জোরপূর্বক হিজাব পরিধানে বাধ্য করতো।
নীতি পুলিশের ইউনিটগুলি ২০০৬ সাল থেকে টহল শুরু করে।
নারীদের মাথা ঢেকে রাখতে হবে এমন আইন পরিবর্তন করা দরকার কি না এ ইস্যুতে সংসদ এবং বিচার বিভাগ উভয়ই কাজ করছে- জানান মনতাজেরি। এর পরদিনই নীতি পুলিশ বিলুপ্তির ঘোষণা এলো।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শনিবার (৩ ডিসেম্বর) টেলিভিশনে বলেন, ইরানের প্রজাতন্ত্র ও ইসলামিক ভিত্তি সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। তবে সংবিধান বাস্তবায়নের পদ্ধতি রয়েছে, যা নমনীয় হতে পারে।
১৯৭৯ সালের বিপ্লবের চার বছর পর ইরানে হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। ওই বিপ্লবের মাধ্যমে মার্কিন-সমর্থিত তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাত এবং ইরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।