বাজারে পুড়ছে ক্রেতাদের হাত!

কাগজ-কলমে দাম কম, বাস্তবে ভিন্ন

আমরা মধ্যবিত্তরা বিপদে আছি, দিন দিন সবজির দাম বাড়ছেই। আগে আমরা মূলা খেতাম না, সেই মূলার দামই এখন ৮০ টাকা। কচুমুখির কেজি ১০০ টাকা। সবজির বাজার আর গরিবের হাতের নাগালে নেই। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের বেতন বাড়ছে না। গতকাল শুক্রবার সকালে বাজার করতে আসা আঞ্জুমান আরা এভাবেই প্রকাশ করছিলেন নিজের ক্ষোভ আর আক্ষেপ। আঞ্জুমান আরার এই ক্ষোভ-হতাশার কারণ ও কথার সত্যতা মেলে বাজার ঘুরেই। কারণ, কাঁচা পেপে ছাড়া কোনো সবজিই ৫০ টাকার কমে পাওয়া যায়নি। আগাম শীতকালীন সবজির দাম তো আকাশছোঁয়া। যেমন, সিমের কেজি ২০০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৬০ টাকা। সরকার আলুর দাম বেঁধে দিলেও তা মানছেন না বিক্রেতারা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে আলু।

সবজি ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, এ সপ্তাহে দাম কিছুটা কমতে পারে, যদিও তারা বৃষ্টির কারনে সরবরাহ ব্যহত হওয়ার শঙ্কা করছেন। মফিজুল ইসলাম নামে একজন বিক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এখন পর্যন্ত সবজির দাম প্রায় একই রয়েছে। দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। আর সপ্তাহ তো মাত্র শুরু হলো, এখনই বলা যাবে না। শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। যে কোনো সবজির বাজারে এলে প্রথমে একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। সিম ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, সময় গেলে এই সিমই ৫০ টাকায় বিক্রি করব।

রাজধানীর রায়ের বাজার সিটি করপোরেশন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এই বাজারে ফুলকপি-বাধাঁকপি ৬০ টাকা, শালগম ৮০ টাকা কেজি, গাজর ১২০ টাকা, সিম ২০০, বেগুন ৯০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা ও শসা ৭০ টাকা এবং পেঁপে কেজি প্রতি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া করলা ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ১০০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কচুছড়া ১০০ টাকা কেজি, কাকরোল ৮০ টাকা কেজি, পটল ৭০ টাকা কেজি, লতি ৮০ টাকা কেজি, ঢেড়স ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ঝিগাতলা কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মোখলেচুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে ফুলকপি বিক্রি ছিল ৫০ টাকা, আজ ৬০ টাকা। মূলা আর শালগম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি গত সপ্তাহে ছিল, বর্তমানে ৮০, একই দাম। এখন শীতকালীন সবজি মৌসুম শুরু হয়েছে। তার মধ্যে বৃষ্টি-বাদল। বৃষ্টির কারণে সবজি বাজারে পর্যাপ্ত আসছে না। তাই শীতকালীন সবজির দাম একটু বেশি।

সবজির দাম কেন বাড়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শীতকালীন সবজি মৌসুম শুরু হয়েছে। তার মধ্যে বৃষ্টি-বাদল। বৃষ্টির কারণে সবজি বাজারে পর্যাপ্ত আসছে না। তাই শীতকালীন সবজির দাম একটু বেশি। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। সময় যতই বাড়বে কিছু সবজির দাম কমবে। তবে সহনীয় পর্যায়ে থাকলে মানুষের জন্য ভালো হয়। আমরা সবজি বিক্রি করলেও আমাদের কিন্তু কিনে খেতে হয়। দাম বাড়লে আমাদের পুঁজিও বেশি লাগে।

এদিকে, কাগজ-কলমেই কেবল আলু-পেঁয়াজের দাম কমেছে, বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখনও বাজারে আলুর কেজি ৪৫ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ ৯৫ টাকা। গত সপ্তাহের মতো আলুর দাম একই থাকলেও পেঁয়াজে বেড়েছে ৫ টাকা। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়।

অথচ গত ১৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের দাম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তিন কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত জানান। সে অনুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আলুর কেজি ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫/৩৬ টাকা ও কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬/২৭ টাকা। ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও দাম নিয়ন্ত্রণে না আসলে ডিম আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও আলু-পেঁয়াজের বাজারে লাগাম টানতে পারেনি সরকার। দাম কমার বদলে উল্টো পেঁয়াজে বেড়েছে।

দাম বাড়ার ব্যাপারে আলু-পেঁয়াজের খুচরা বিক্রেতা কামরুল হোসেন বলেন, দাম কেন বেড়েছে তা তো আমার জানা নেই। তবে মনে হচ্ছে দাম আরও বাড়বে। কারণ আমার এই পেঁয়াজগুলো গতকাল কেনা। গতকাল আমি ক্রস পেঁয়াজ ৮২ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৮৪ টাকা দরে কিনেছি। আজকে ক্রস পেঁয়াজ ৮৮ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি করছে পাইকাররা।

বাজারে ইলিশ মাছ ১০৫০- ১৭০০ টাকা, রুই মাছ ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০-৬০০ টাকা, বেলে মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৯০- ২০০ টাকা, কক মুরগি ২৮৮-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুদি দোকানের পণ্যের দাম আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১০৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।