বাংলাদেশকে বাগে আনতেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতি

দুশ্চিন্তায় পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা

শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ কোনো নিশেষধাজ্ঞার মুখে পড়লে পণ্য না নেওয়া কিংবা অর্থ পরিশোধ না করার শর্ত যুক্ত করে তৈরি পোশাকের ঋণপত্র দিয়েছে একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ফলে এবার সেই দুশ্চিন্তা আরও কিছুটা বেড়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো ঋণপত্রের সাধারণ শর্তের মধ্যে বলেছে, বাংলাদেশ কোনো নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়লে তারা পণ্য নেবে না। যদি পণ্য জাহাজীকরণের পরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে অর্থ পরিশোধ করবে না বলে হুঁশিয়ারি করেছে।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশকে বাগে আনতেই মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই শ্রমনীতি। তারা প্রয়োজনে সরকার পরিবর্তনের তাদের পুরোনো নীতি বাংলাদেশে প্রয়োগ করতেও তারা দ্বিধা করবে না। তারা কখনো অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ‘ভিসা নীতি’র প্রয়োগ, কখনো মানবাধিকার নীতি এবং সর্বশেষ এই শ্রমিক অধিকার নীতিকে তারা সামনে নিয়ে আসছে। বাংলাদেশ বা কোনো দেশের শ্রমিকদের স্বার্থে নয়; এর পেছনে রাজনীতিটাই মুখ্য। আর সেই রাজনীতি হলো যেকোনোভাবে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করা।
বিজিএমইএর সভাপতি এটা কতটা বিপদজনক তা স্বীকার করে বলেন, এতে করে অনেক ব্যাংক মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে নাও পারে। তার কারণ হচ্ছে, নতুন এই শর্তের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির পর অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টা কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। আবার ক্রেতা পণ্য না নিলে স্টক হয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক অধিকার নীতি ব্যবহার করে পোশাকশ্রমিক ও সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলার একটিই কারণ, তা হলো বাংলাদেশকে তাদের ফাঁদে না পড়ার জন্য শাস্তি দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্র তার এশিয়া-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে তাদের সঙ্গে চায়। তারা চায় বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি। সাগরের গ্যাস উত্তোলনেও তারা একচেটিয়া অধিকার চায়। এমনকি কোয়াডে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে তারা আগ্রহী। এই চাপ এড়াতে বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতির মূল সূত্র ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে একাধিকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা মানতে রাজি নয়।

এ প্রেক্ষাপটেই যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিনীতি নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা একেবারে অমূলক নয়। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যে কল্পনা আক্তারদের কথা বলেছেন, তাঁদের দিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হতে পারে, যাতে শ্রমিক অধিকারের মতো একটি মহৎ বিষয়কে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো যায়।

এর আগে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ার পর বিএনপি যেমন ব্যাকফুটে চলে গেছে, তেমনি অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রও ব্যাকফুটে চলে গেছে। কিন্তু তারা যে ভেতরে ভেতরে কোন কূটচালের পরিকল্পনা করছে তা এখন বোঝা গেল। মাঝখানে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সংলাপের আহ্বান-সংবলিত তিন দলের কাছে দেওয়া চিঠি নিয়ে এ-পার্টি ও-পার্টির কাছে ছোটাছুটি করেছিলেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সেই চিঠিতেও নির্বাচন তাদের মনঃপূত না হলে ভিসা নীতি প্রয়োগের প্রচ্ছন্ন হুমকি ছিল।