চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন যেকোনো মুহূর্তে বহিষ্কার হতে পারেন দায়িত্ব থেকে। চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলায় মেয়র রেজাউল করিম খোকনকে দোষী সাব্যস্ত করে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে। তিনি এখনো গ্রেপ্তার কিংবা পুলিশি হেফাজতে না থাকায় আদালত তাকে পলাতক আসামি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অথচ তিনি, প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও দেখানো হয়েছে পলাতক হিসেবে। জোরারগঞ্জ থানায় একাধিক গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকলেও তাকে এখনও গ্রেফতার না করার কারণে পুলিশ-প্রশাসের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল কিংবা জামিন আবেদন করেননি মেয়র রেজাউল করিম খোকন।
জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল মেয়র রেজাউল করিম খোকনের বিরুদ্ধে মামলার রায়ের নথি ও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবনা চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় চট্টগ্রাম হতে প্রাপ্ত ১০ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখের ১৮৯ নং পত্রের আলোকে উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রস্থ্য স্মারকের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলার বারিয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে দায়েরকৃত সিআর মামলা নং ১৩৬/ ২০২১ এর সর্বশেষ অবস্থা উল্লেখ পূর্বক আদেশের সার্টিফাইড কপি সহ প্রস্তাব প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হইল।
চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ নগর উন্নয়ন বিভাগের যুগ্ম সচিব তানিয়া সরকার, বিভাগ নগর উন্নয়ন ২ অধিশাখার যুগ্ম সচিব, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব, মেয়র বারইয়ারহাট পৌরসভা, স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিবের একান্ত সচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রোগ্রামার বরাবর। তবে চিঠিতে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি।
চিঠি প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুর রহমান এই প্রতিনিধিকে বলেন, চিঠির মাধ্যমে মেয়রের বিরুদ্ধে রায়ের নথি আমরা তলব করেছি। নথি প্রাপ্তির পর আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। সেটা হয়তো বহিষ্কার পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়া বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রেজাউল করিম খোকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন অধিদপ্তর তদন্ত করছেন। বারৈয়ারহাট পৌরসভা বৈজ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্পের আওতায় বিধিবহির্ভূত জমি ক্রয় করে ৫৩ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মেয়র রেজাউল করিম খোকনের বিরুদ্ধে। সেটিও তদন্তনাদিন রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্ধডজন মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ ব্যাপারে মেয়র রেজাউল করিম খোকন দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, সাজা হওয়া মামলাসহ অন্যান্য মামলায় জামিনে রয়েছেন তিনি। এছাড়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়েছেন।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জমি ক্রয়ে অর্থ আত্মসাতের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, সরকারি মৌজা দরে জমি ক্রয় করা হয়েছে সেখানে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ নেই। সরকারি সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। তারা যদি সত্যতা পায় তাহলে যে শাস্তি দেয় মাথা পেতে নেব।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারৈয়ারহাট পৌরসভার একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র দৈনিক দেশ বর্তমান পত্রিকাকে নিশ্চিত করে জানায়, মেয়র রেজাউল করিম খোকন সাবেক এক কমিশনারের মাধ্যমে অত্যন্ত গোপননীয়তার সাথে জমিটি ক্রয় করেছেন। উক্ত জমি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে গহীন পাহাড়ি এলাকায় এবং পৌরসভা থেকে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে। ক্রয়কৃত জমিতে গাড়ি যোগাযোগ ব্যাবস্থা নেই বললেই চলে। শুকনো মৌসুমে অটো কিংবা পায়ে হেঁটে যাওয়া গেলে বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থেকে। এমন একটি লোকেশনে বর্জ্য ফেলার জমি ক্রয় কোনো প্রকারেই গ্রহণ যোগ্য নয়। এছাড়া ক্রয়কৃত জমি তৎকালীন সময়ে বাজার মূল্য ছিল ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তিনি জমির মধ্যস্থতাকারীকে প্রতি কড়া জমি ১৮ হাজার টাকা প্রধান করেন ও বাড়তি সুবিধা দেন গোপনীয়তা রক্ষার জন্য। সরকারিভাবে আনুষ্ঠানিক জমি ক্রয়ের এক বছর আগেই তিনি নগদ টাকায় জমিটি নন জুডিশিয়াল স্টাম্পের মাধ্যমে বায়না করেন। পরবর্তীতে সরকারিভাবে জমি ক্রয় দেখিয়ে বাড়তি দামে চেক উত্তোলন করে প্রায় ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। জমির মধ্যস্থতাকারী সাবেক কমিশনার (কাউন্সিলর) ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেই মেয়রের হাতে বুঝিয়ে দেন, বিনিময়ে বাড়তি টাকা পান ওই কমিশনার। তবে জমির অন্যান্য শরিকরা কড়া প্রতি ১৮ হাজার টাকা করে পেলেও ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। তারা বলেন, কমিশনার জমি বিক্রি করেছে তাকে জিজ্ঞেস করুন।
অন্য একটি সুত্র জানায়, পৌরসভার জন্য জমি ক্রয়ের যথাযথ নিয়ম পালন করেনি মেয়র রেজাউল করিম খোকন। কাগজে কলমে জমি ক্রয় কমিটিতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমানকে দেখানো হলেও জমি ক্রয়ের বিষয়টি মিনহাজুর রহমানকে অবগত করা হয়নি। পদোন্নতি হয়ে বদলি হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।
দেশ বর্তমান/এআই