বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীমসহ দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (১২ জুন) সকালে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন হাতপাখার প্রার্থীর মিডিয়া কমিটির সদস্য কে এম শরিয়তুল্লাহ।
তিনি বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মেইন রোডের একটি কেন্দ্রে প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। এর আগে কাউনিয়ার মেইন সড়কের এ কাদের চৌধুরী স্কুল কেন্দ্রে হাতপাখার ভোটার ও মানিক মিয়া স্কুল কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে কে এম শরিয়তুল্লাহ বলেন, এ কাদের স্কুলে তাঁদের প্রার্থীর ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়। এ সময় তাঁর গাড়িবহরে থাকা নেতা-কর্মীদের মারধর করেন নৌকার কর্মীরা।
খবর পেয়ে ফয়জুল করীম কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশ করে প্রিসাইডিং অফিসারকে অভিযোগ জানান। পরে কাউনিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে ঢুকতে চান ফয়জুল। এ সময় নৌকার নেতা-কর্মীরা তাঁকে বাধা দেন। বলা হয়, ‘ভেতরে সবাই ঢুকতে পারবেন না। আপনারা সবাই ঢুকলে আমরাও ঢুকব।’ এরপর হাতপাখার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নৌকার নেতা-কর্মীদের মারামারি হয়।
এ বিষয়ে হাতপাখার প্রার্থী ফয়জুল করীম অভিযোগ করেন, ‘আমি কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে নৌকার লোকজন বাধা দেন। বাধা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে চাইলে আমাকেসহ নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়।’
তবে নৌকার কর্মী বিদ্যুতের অভিযোগ, ‘তারা দলবল নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে চায়। তখন তাদের বলি, এত মানুষ ঢোকা যাবে না। পরে চাকু নিয়ে হামলা করেছে হাতপাখার লোকজন। তাতে আমরা বহুজন আহত হয়েছি।’
এদিকে হাতপাখার প্রার্থীর মিডিয়া সেল থেকে দাবি করা হয়, ওই কেন্দ্রে তাদের প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা করা হয়। এ সময় তাদের কর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘হাতপাখার প্রার্থী দলবল নিয়ে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। এটি কেন্দ্রের বাইরের বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’
এ ছাড়াও ২ নম্বর ওয়ার্ডের শেরে বাংলা দিবা-নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। আ. লীগের এ কাজে পুলিশ ও প্রিসাইডিং অফিসার নীরব ছিলেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ওজোপাডিকা-২ কেন্দ্রে হাতপাখার পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি প্রিসাইডিং অফিসারকে জানালে তিনি ব্যবস্থা নেননি।
এদিকে হাতপাখার প্রার্থীর মিডিয়া সেল থেকে দাবি করা হয়, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানালেও তিনি দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেননি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আসমত মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে হাতপাখার ক্যাম্প ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ভেতরে হাতপাখায় ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। দায়িত্বরত প্রিসাইডিং ও ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হলেও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণাফুলিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মহিলা ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নৌকায় জোড়পূর্বক ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। স্থানীয় কাউন্সিলের মেয়ে এ কাজ করছেন। প্রিসাইডিং অফিসার এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল ওয়াহেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইভিএম নষ্ট, প্রিসাইডিং অফিসার এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয়েছে।
২২ নম্বর ওয়ার্ডে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কেন্দ্রে হাতপাখার মহিলা কর্মীদের সেন্টারের কাছাকাছি ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না। ২ নম্বর ওয়ার্ডের এ কাদের চৌধুরী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হাতপাখার কর্মীদের মারধরের অভিযোগের খবর পেয়ে প্রার্থী উপস্থিত হলে, তাঁর গাড়ি ও সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর নৌকার কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।