বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুই একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। তিনি সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়েছেন, নায়ক থেকে হয়েছেন মহানায়ক। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে। তিনিই প্রথম নেতা যিনি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের অন্তরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি দক্ষ, সুদক্ষ বিচক্ষণ বুদ্ধিদীপ্ত, তার ছিল অকল্পনীয় সাহস আর অসাধারণ বীরত্ব।
পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক রাষ্ট্রনায়কের আবির্ভাব হয়েছে কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত এমন অপরাজেয় মনোবল অতুলনীয়। জাতির পিতার বিদেশ নীতি ছিল, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়, সকলের প্রতি মৈত্রী। তিনি যুদ্ধ চাননি, চেয়েছেন উন্নয়ন। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্বাস এবং সন্তানের মত স্নেহ করতেন। তার আদর্শে বলীয়ান হয়ে আসুন আমরা বৈরীদের মধ্যে অবৈরীয় হয়ে, যারা ভয়প্রাপ্ত, দুঃখপ্রাপ্ত, শোকগ্রস্ত তাদের মধ্যে ভয়হীন, দুঃখহীন ও শোকহীন হয়ে সুখে বসবাস করি। বিশ্ববরেণ্য নেতারা তার সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা অসাধারণ এবং ঐতিহাসিক। কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ট্রো, আমেরিকার হেনরি কিসিঞ্জার, ইয়াসির আরাফাত, নোবেল বিজয়ী উইলী ব্র্যান্ড বলেন, তিনি ছিলেন আপোষহীন নেতা, কোমল হৃদয়ের মানুষ, শোষিত ও বঞ্চিতদের আশ্রয়। কাস্ট্রো বলেই ফেলেছেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি’। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখলেন ‘যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’।
বঙ্গবন্ধু মাঝে আমরা মাতৃভাষার প্রতি গভীর দরদ দেখেছি। সেটা তাঁর লেখা ও কাজে প্রকাশ পায়। তিনি বাংলায় জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন। সৃষ্টি হলো নতুন ইতিহাস, পাকিস্তান আমলে ১৯৫৭ সালে তিনি চীন গিয়েছিলেন। এক সংবর্ধনা সভায় তিনি ভাষণ দিলেন, কিন্তু তা বাংলায়। জনাব আতাউর রহমান তা অন্যদের বোঝার জন্য ইংরেজিতে করেছিলেন। সে সভায় ভারতের প্রতিনিধি শ্রী মনোজ বসু তার ভাষণের পর, তাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ভাই মুজিব, আমরা দু‘দেশের লোক কিন্তু আমাদের ভাষা কেউ ভাগ করতে পারে নাই। তোমরা বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছো, ভারতের বাংলা ভাষাভাষী লোকেরা তার জন্য গর্ববোধ করেন।
বাঙালির জীবনে মার্চ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাসেই বঙ্গবন্ধু আগের রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চ তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই কালজয়ী ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেদিন থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়। বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ল মুক্তিযুদ্ধে। দুঃখের বিষয় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিল তার প্রাণ। হলো মহানায়কের মহাপ্রয়াণ। মহানায়ক‘কে হত্যা করলে কি হবে, তার জীবন দর্শন আদর্শ ও দেশপ্রেমকে হত্যা করা যায়নি। তার অভিপ্রেরণা, রাষ্ট্রের চার মূল স্তম্ভ, প্রজন্মের কাছে আবির্ভূত হল চৈতন্যের উজ্জ্বল দীপশিখায়। তিনি হয়ে গেলেন চিরকালীন বাতিঘর। মানুষ বেঁচে থাকে যোগ্য উত্তরসূরির কারণে। সেই যোগ্য উত্তরসূরি হলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বড় বড় প্রকল্প শেষ হয়েছে, অন্যগুলি শেষের পথে।