ফের সংঘর্ষে জড়ালো চবি শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বিবদমান দুটি পক্ষ দুই দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে। পৃথক দুই দিনের সংঘর্ষে চবি’র একজন সহকারী প্রক্টরসহ উভয় পক্ষের আহত হয়েছেন অন্তত ১৩জন।  সংঘর্ষের পর ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে কোন সমঝোতা বা শান্তি আলোচনা হয়নি।

খবর নিয়ে জানা গেছে, মারামারির পর ক্যাম্পাস পরিস্থিতি থমথমে।  যেকোন মুহূর্তে ফের তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াতে পারে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের।  তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষ বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হলেও এ নিয়ে চবি প্রশাসন কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি।

এদিকে মারামারির ঘটনায় কোন পক্ষ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত পুলিশের কাছে অভিযোগ বা মামলা দায়ের করেননি।  তবে সমঝোতার লক্ষে রাতে বৈঠকে বসতে দু’পক্ষের সিনিয়র নেতারা রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ওই বৈঠকে দু’পক্ষের সিনিয়র নেতাদের সাথে চবি’র প্রক্টরিয়াল বডিও উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন সিক্সিটি নাইনের নেতা চবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু।

গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি রাতে শাটল ট্রেনের আসনে বসাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির জেরে দু’দফায় সংঘর্ষে জড়ায় বগিভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন ও ভিএক্স গ্রুপের অনুসারীরা।  উভয় পক্ষের মধ্যে ঘটে ইটপাটকেল ছোঁড়া এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা।  সংঘর্ষের প্রথম দিন দু’পক্ষের তিনজন, দ্বিতীয় দিন আহত হন চবি’র সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলামসহ ১০জন।

তিনি জানান, ক্যম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে সংঘর্ষে জড়ানো দু’পক্ষের সিনিয়র নেতারা আজ শনিবার রাতে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন।  সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিও উপস্থিত থাকবেন।

মারামারির ঘটনা নিয়ে চবি প্রশাসন কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন কিনা জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘চবি প্রশাসন উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে হয়তো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারেন।’

সংঘর্ষে জড়ানো কোন পক্ষই শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত হাটহাজারী থানায় অভিযোগ দেননি বলে জানিয়েছেন চবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান।  তবে চবি ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে চবি’র সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে আজ শনিবার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে রিসিভ করেননি চবি’র প্রক্টর রবিউল হাসান ভুঁইয়া।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের আসনে বসা নিয়ে বগিভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন এবং ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  এতে উভয় পক্ষের তিনজন আহত হন।

বৃহস্পতিবারের মারামারির ঘটনা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টার কথা দু’পক্ষের নেতা গণমাধ্যমকে জানালেও ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১২ টার দিকে ফের সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ।  এসময় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি আনে।

প্রসঙ্গত, চবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দুই পক্ষে বিভক্ত।  এক পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ও আরেক পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আবার দুই পক্ষের মধ্যে ১১টি উপপক্ষ আছে।  গেল দুই রাতে সংঘর্ষে জড়ানো সিক্সটি নাইন ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) উভয় উপপক্ষই আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।  এর মধ্যে ভিএক্স’ও নেতৃত্বে চবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়। সিক্সটি নাইনের নেতৃত্বে আছেন চবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু।