চট্টগ্রামের প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে খালি কনটেইনারের স্তুপ। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেড়গুণ খালি কনটেইনার পড়ে আছে প্রাইভেট আইসিডিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুকিং না মেলায় এসব কনটেইনার অলস পড়ে আছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কনটেইনার পরিবহনে মন্দার ধকল সামলিয়ে ওঠা যাবে না।
চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রাইভেট আইসিডি। দেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন আইসিডির সংখ্যা ২১টি। বর্তমানে এনবিআর অনুমোদিত ৩৭ ধরণের আমদানিকৃত পণ্য অফ-ডক বা প্রাইভেট আইসডিগুলো হ্যান্ডলিং করছে। আমদানিকৃত এসব পণ্য জাহাজ থেকে বন্দরে নামানোর পর সেগুলো প্রাইভেট আইসিডিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব পণ্য রফতানিকারকদের সরবরাহ দেয়ার কার্যক্রম মূলত বেসরকারি আইসিডিগুলোতে পরিচালিত হয়।
এছাড়াও এসব ডিপোতে শতভাগ রফতানি পণ্য কনটেইনার হ্যান্ডেল করা হয়। কনটেইনারে বোঝাইকৃত পণ্য সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরের হুক পয়েন্টে (ইয়ার্ডে) নিয়ে যাওয়া হয় প্রাইভেট আইসিডি থেকে।আন্তর্জাতিক রুটে পণ্য পরিবহনে কনটেইনারবাহী পণ্য পরিবহনের ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে।
অফ-ডকগুলোর মালিকদের সংগঠন-বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে অফ-ডকগুলোতে ৩৫ হাজার টিইইউএসের (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা হিসাবে) বেশি কনটেইনারের মজুত থাকে না। বর্তমানে খালি কনটেইনারের মজুত দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার টিইইউএস। গতকাল শনিবার পর্যন্ত অলস পড়ে ছিলো ৫৪ হাজার ৭৮২ টিইইউএস।
গত এপ্রিল মাসে খালি কনটেনারের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৫৬ হাজার টিইইউএস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কনটেইনারবাহী পণ্য পরিবহন কমে যাওয়ায় প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে খালি কনটেইনারের বিশাল স্তুপ, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০ হাজার টিইইউএস বেশি। এখনও বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দার ধকল সামলিয়ে ওঠতে না পারার বার্তা দিচ্ছে অলস বসে থাকা খালি কনটেইনার। অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে কনটেইনারের মজুত রাখার ভাড়া কম হওয়ায় কারণে আন্তর্জাতিক কোম্পানীগুলো খালি কনটেইনারগুলো বাংলাদেশ থেকে পরিবহন করছে না-এমন ধারণাও করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেও কনটেইনারের সংকট ছিলো। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়েও রফতানিকারকরা কনটেইনার পায়নি। যুদ্ধ এখনও থামেনি কিন্তু থমকে আছে বিশ^ অর্থনীতি। ব্যবসায়ীরা ডলার সংকট, সরকারের আমদানি সংকোচন নীতি এবং যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবে ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে কনটেইনার পরিবহনে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, ২০২২ সালে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিমুখী খালি কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ৩১ লাখ ৩৩ হাজারটি টিইইএস)। এর আগের বছর পরিবহন হয়েছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার। সেই হিসাবে প্রায় আড়াই শতাংশ কমেছে কনটেইনার পণ্য পরিবহন।
দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এরমধ্যে ৯৮ শতাংশ কনটেইনার পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বাকি দুই শতাংশ হয় মংলায়। পায়রা বন্দর দিয়ে সাধারণ পণ্য খালাস হলেও কনটেইনারবাহী পণ্য পরিবহন এখনও শুরু হয়নি। দেশের রফতানি পণ্যের প্রায় পরিবহন হয় কনটেইনারে করে। অন্যদিকে সিমেন্ট ব্যতীত অন্য সব শিল্প খাতের কাঁচামাল আনা হয় কনটেইনারে। খালি কনটেইনারের পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যায় দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।
বিকডার সাধারণ সম্পাদক রুহল আমিন সিকদার দেশ বর্তমানকে বলেন, নানা কারণে প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে কনটেইনারের স্তুপ হয়েছে। বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দা, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ায় কনটেইনার পরিবহন কমে গেছে। তিনি বলেন, একটি ২০ ফুট দীর্ঘ খালি কনটেইনার রাখার জন্য ১১৫ টাকা এবং ৪০ ফুট দীর্ঘ খালি কনটেইনার রাখার জন্য ২০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক কম। কনটেইনার জমে থাকার এটিও একটি কারণ, বলছেন বিকডার সাধারণ সম্পাদক।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেশ বর্তমানকে বলেন, রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের অর্ডার কমে গেছে। বায়াররা আগের মতো বিগ ভলিউমে অর্ডার নিচ্ছে না। যার কারণে কনটেইনার বুকিং কমে গেছে। বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা করে কীভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় সেটি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। সংকট অব্যাহত থাকলে পোশাক রফতানি বড় ধরণের হুমকির মুখে পড়বে।