পেঁয়াজ-আলু নিয়ে সুখবর নেই বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে!

বুধবার (৮ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি মনিটরিং ও রিভিউ কমিটির সভাশেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত কেন আগেই নেয়া হলো না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, `আপনি সাংবাদিক, যথেষ্ট বুদ্ধিমান। যেমন- ধরেন, আলু আমদানি করতে হলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। আমরা যে দুই মাস আগে আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছি, তখন তাদের অনুমতি নিয়েছি। তারাও এটি চিন্তা করে। একইভাবে ডিমের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। আমরা যদি পিছনের সমর্থন না পাই, তাহলে আমরা অনেক সময় কাজটা করতে পারি না। সংকট যখন প্রকট হয়ে যায়, তখন তারা মেনে নেন। কিন্তু তখন আবার অনেক দেরি হয়ে যায়।’ আলু ও ডিম ছাড়াও সারা বছর বাজারে অস্বস্তি থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘সরবরাহ যদি ভালো থাকে, তাহলে সমস্যা হয় না। আবার আলু যদি অতিরিক্ত থেকে যায়, তখন প্রশ্ন করা হয়, কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না। আপনি কী ব্যবস্থা করেছেন? দুই ভাবেই সমস্যা। উৎপাদন যাতে বাড়ে, সেই প্রচার করেন।’ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে মানুষের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো সুখবর আছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় হলো আমাদের দেশের উৎপাদন, আরেকটি হলো আমদানি করা। বিভিন্ন জিনিসের বিভিন্ন রকম অবস্থা। পেঁয়াজের দাম কবে কমবে? এটি আমরা সবাই বুঝি যে, কৃষক যখন ফসলে ঘরে তুলবে, তখন নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠবে। হয়তো আগামী মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজটা বাজারে উঠবে, তখন হয় তো পেঁয়াজের দাম কমবে।’ বাজারে আলু আসার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আবার আলু যেমন ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাজারে উঠতে শুরু করবে, তখন দাম কমবে। এখন এটি গেল নিজেদের উৎপাদনের বিষয়ে। আবার যখন আমরা তেল ও চিনির কথা বলি, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে কী দাম আছে, সেটির ওপর নির্ভর করে। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, দাম বাড়বে বা কমবে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে, আমাদের যা প্রয়োজন, তার চেয়ে ২০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। এটি আমরা আমাদানি করে পূরণ করি, যার ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। সেখানেও দাম বেড়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে ভারতীয় বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৫ বা ১১০ টাকা। গতকাল (৭ নভেম্বর) দেখলাম, ওরা ২৫ রুপি ভর্তুকি দরে মানুষকে দিতে শুরু করেছে। আমাদের পেঁয়াজ প্রায় শেষ। যে কারণে পেঁয়াজের দামটা অনেকখানি নির্ভর করে আমাদের নিজস্ব উৎপাদন উঠার ওপরে। পাশাপাশি ভারত পেঁয়াজের ন্যূনতম দাম ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে। যেটি আমাদের টাকায় প্রতি কেজি প্রায় ৯৫ টাকা পড়ে। সেটির নিচে ওরা রফতানি করতে পারবে না। ওই টাকায় আমরা আমদানি করলে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১২০ কিংবা ১২৫ টাকা পড়ে যাবে। এখন আমাদের নিজেদের উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে হবে। আলুর বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একইভাবে আমাদের কাছে যা আলু আছে, তা মূলত কোল্ড স্টোরেজে। প্রয়োজন অনুসারে ভীষণ টাইট অবস্থা। আশা করি, ডিসেম্বরের শেষ দিকে আলু উঠতে শুরু করবে। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে একটি আগাম আলু আসে উত্তরাঞ্চল থেকে, সেটি এলে দাম কিছুটা কমবে। আমদানিও শুরু হয়েছে, বাজারে সেটার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভালোভাবে আমদানি হলে দাম কিছুটা কমে আসবে – এ আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে কিছুটা সময় লেগেছে। এরই মধ্যে প্রথম একটি চালান দেশে এসেছে, যার প্রভাব বাজারে দেখছি। আমদানি করা ডিম ১১ কিংবা সাড়ে ১১ টাকায় পাওয়া যায়। আশা করি, আরও আমদানি হলে ডিমের যে দামটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সেটাতেই পাওয়া যাবে। বাজারে দেশীয় পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সবজির দাম বাড়ছে কখনো। এছাড়া, বৃষ্টি, পরিবহন ও পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে দাম বাড়ছে। তবে গত দু-তিনদিন ধরে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা করে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। তাছাড়া আগামী ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে শীতের সবজির দাম কমে যাবে। বাজারে দাম না নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে তিনি বলেন, যখন মুদ্রাস্ফীতি হয়, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দামের ওপর মূল্যস্ফীতি একটা বড় প্রভাব বিস্তার করে। এখন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি রয়েছে। সেটি সমাধান করতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অন্য কেউ খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তবে পেঁয়াজ-আলু আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কমে পাওয়া শুরু হবে। কারণ নিজেদের উৎপাদনটা তখন চলে আসবে।