পূর্বাচলে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত, ডোপ টেস্টে ২ আসামি পজেটিভ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ (২২) নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার তিন আসামির ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) হয়েছে।

গাড়ি চালানোর সময় তিন আসামি মদ্যপ ছিলেন কি না, তা জানতে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে তাঁদের ডোপ টেস্ট করা হয়। পরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাফিয়া শারমীন এর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এএফএম মশিউর রহমান জানান, ডোপ টেস্টে ২ জনের পজেটিভ পাওয়া গেছে। তারা অ্যালকোহল নিয়েছিল। এ বিষয়ে রিপোর্ট  দেয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান জানান, গ্রেফতারদের রোববার আদালতে তোলা হবে।

বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম জানান, গ্রেফতাররা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাক্কা দিলে বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন ও অপর দুই শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার প্রধান বলেন, ব্রেক ফেল হওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই মামলায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। রোববার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে রয়েছেন প্রাইভেট কারের চালক মুবিন আল মামুন (২০)। তিনি রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে।

গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন ওই গাড়িতে থাকা মিরপুর পীরেরবাগ এলাকার রিজওয়ানুল করিমের ছেলে মিরাজুল করিম (২২) ও উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আসিফ চৌধুরী (১৯)। গ্রেপ্তার তিনজনই শিক্ষার্থী।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দিনগত রাত তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরে ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট (কুড়িল-কাঞ্চন সড়ক) এলাকায় পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থী নিহত হোন। গুরুতর আহত হোন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান খান (২২) ও অমিত সাহা (২২)। মেহেদী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এবং অমিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নিহত মুহতাসিম মাসুদ (২২) বুয়েটের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি রাজধানীর কলাবাগান থানার গ্রিনরোড এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় নিহত মুহতাসিমের বাবা বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন আইনে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন।

নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের ডোপ টেস্টের পর  শুক্রবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। নিহত মুহতাসিমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারটি পুলিশ জব্দ করেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মুহতাসিম তাঁর মোটরসাইকেলে করে দুই বন্ধুকে নিয়ে ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট এলাকায় খাওয়াদাওয়া করার জন্য আসেন। তাঁরা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিলেন। রাত আনুমানিক ৩ টার দিকে নীলা মার্কেট মোড়ে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। এসময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট কার তল্লাশি চৌকিতে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মুহতাসিম মাসুদ মারা যান। আহত হন তাঁর দুই সহপাঠী।

পরে তল্লাশি চৌকিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা গাড়িচালকসহ তিনজনকে আটক করে রূপগঞ্জ থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ জানায়, ওই প্রাইভেট কার থেকে একটি মদের খালি বোতল ও এক ক্যান বিয়ার পাওয়া গেছে।