পিতার মারধরের শিকার তামান্না, পারিবারিক নিপীড়নের মর্মান্তিক ইতিহাস

গাজীপুর সদর উপজেলার সিংড়াতলী গ্রামে এক মর্মান্তিক ঘটনায় নিজ পিতার হেতেই মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন তামান্না (২৫) নামের এক তরুণী। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শৈশব থেকে পিতার অবহেলা আর বৈরিতার মাঝেই বেড়ে উঠেছেন তিনি।

১৯৯৫ সালে মিনারা খাতুনের বিয়ে হয় তাবারেক হোসেন সরকারের সঙ্গে। ২০০০ সালে দাম্পত্য কলহের জেরে তাদের বিচ্ছেদ হয়, তখন তামান্নার বয়স ছিল মাত্র সাড়ে চার মাস। এরপর থেকেই মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে মা মিনারা খাতুন চলে আসেন শ্রীপুর উপজেলার কর্নপুর গ্রামে নিজ পিতার বাড়িতে। সেখানেই তামান্নার লালন-পালন, পড়াশোনা ও চিকিৎসার যাবতীয় ব্যভার বহন করেন মা। তামান্নার দাবি, বিচ্ছেদের পর কখনো তার বাবা তার খোঁজখবর নেননি।

মায়ের অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটের মুখে ২০১৬ সালে তামান্না ভরনপোষণের দাবিতে বাবার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ২০২০ সালে আদালত তার পক্ষে রায় দিয়ে তাবারেক হোসেন সরকারকে মাসিক ৮ হাজার টাকা ভরনপোষণ দিতে নির্দেশ দেন। তবে আদালতের এই রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখনও টাকা পাননি তামান্না।

সোমবার দুপুরে বাবার বাড়িতে গিয়েই ঘটে অপমান ও শারীরিক নিপীড়নের ঘটনা। তামান্না জানান, সম্প্রতি অনার্স পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ার খবরটি শুধু বাবাকে জানাতেই সেখানে যান তিনি। কিন্তু বাবা তাকে দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং কোনো কথা না শুনেই মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে বুকে লাথি মারা হয় তাকে, বাবার পরিবারের অন্য সদস্যরাও তাকে টেনেহিঁচড়ে অপমান করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

এ নিয়ে গ্রামে ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দা ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, একজন মেয়ের নিজের বাবার কাছে যাওয়া কোনো অপরাধ নয়। এ ধরনের আচরণ নৈতিক ও মানবিকতার চরম লঙ্ঘন। তারা দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যে তামান্না জয়দেবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তবে এখনও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তার দাবি।এদিকে, অভিযোগের সবকিছু অস্বীকার করেছেন বাবা তাবারেক হোসেন সরকার।

জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেরাজুল ইসলাম বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। মেয়েটির ন্যায়সঙ্গত অধিকার পেতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কর জানান, “অভিযোগের সত্যতা যাচাই এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।”