চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোডে বসুধা রেলওয়ে মেন্স সিটিতে বরাদ্ধকৃত সিঁড়ি ও পার্কিংয়ের জায়গায় নকশাবহির্ভূত ৮৪টি দোকানঘর বানিয়ে অন্তত ৩০ কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে শাহ আলম প্রকাশ এসি শাহ আলম ও শাহনেওয়াজ নামের দুই ডেভলপারের বিরুদ্ধে। পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান বানানোতে মার্কেটের সৌন্দর্যহানীর পাশাপাশি পার্কিং না থাকায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে মূল দোকানের মালিকরা। এমনকি ২০১৮ সালে গড়ে ওঠা বসুধা রেলওয়ে মেন্স সিটি সেন্টার দোকান মালিক সমিতির নামের সাথে সমবায় সমিতি যোগ করে ২০২১ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেন তারা। এরপর থেকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ দোকান বাণিজ্যের পাশাপাশি প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন দোকান মালিকদের সংগঠন বসুধা রেলওয়ে মেন্স সিটি সেন্টার দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। তবে শাহ আলমের দাবি, তিনি আরেক ডেভলপারের সাথে চুক্তি করে পার্কিংয়ে দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করেছেন। দখলদাররা অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ ও বিক্রি করে অন্যায় করছে বলে জানান বসুধা বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার খান। এদিকে শীঘ্রই অবৈধভাবে পার্কিংয়ে গড়া ওঠা দোকান ভেঙে পার্কিংয়ে রূপান্তর করবে বলে জানান রেলওয়ে মেন্স স্টোরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
বসুধা রেলওয়ে মেন্স সিটি সেন্টার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেন নাসির দেশ বর্তমানকে বলেন, পার্কিংয়ে অবৈধভাবে দোকান বানিয়ে বিক্রি করছে এই দখলদার চক্র। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বেশ কিছুদিন আগে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। তারা ছলচাতুরী করে হাইকোর্টকে ভুল বুঝিয়ে এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিলেও সস্প্রতি তা খালাস করে দেয়ায় অবৈধ দোকানগুলো ভেঙে ফেলবে কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃত কর্ণধার বসুধা বিলন্ডার্সের এমডি আব্দুল জব্বার প্রয়োজনে মার্কেটে স্থাপনা নির্মাণ ও বিক্রিসহ সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রেজেস্ট্রি করে আমাদের কমিটিকে অনুমোদন দেন। কিন্তু দখলদার চক্রটি প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে গায়ের জোরে দখলবাজী ও চাঁদাবাজি করছে। এছাড়া, দোকান মালিকরা মার্কেটে গেলে ভয়ভীতি দেখিয়ে দোকান বিক্রি করে দেয়ার জন্য জোর করে এবং সার্ভিস চার্জের নামে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদাবাজি করে।
মার্কেটটির সাবেক সভাপতি রনজিত সরকার দেশ বর্তমানকে বলেন, ২০১৮ সালে গঠিত সমিতির নাম চুরি করে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে গোপনে সমবায় থেকে নিবন্ধন করে মার্কেট দখল, দোকান ভাঙচুরসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও প্রকাশ্যে মাইকিং করে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করছে। এখন উল্টো আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। দখলবাজদের বিরুদ্ধে আদালতে ৩টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ১টি পিবিআই, ২টি সিআইডি তদন্ত করছে। মার্কেটের লেভেল ৫ -এ ৬০টি দোকানে লুটতরাজ চালিয়ে ভেঙে দিয়েছে। মূল দোকান মালিকদের অনেকে এই সন্ত্রাসী ভূমিদস্যুদের ভয়ে মার্কেটে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসসূচি সমিতির পক্ষ থেকে গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি।
রেলওয়ে মেন্স স্টোরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম দেশ বর্তমানকে বলেন, দোকান নির্মাণ এবং বিক্রির জন্য এসি শাহ আলম ও শাহনেওয়াজ যেই চুক্তি করে তা আইনত অবৈধ ও অন্যায়। এটাকে পুঁজি করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পার্কিংয়ের জায়গায় গড়া দোকান ভাঙার যে নির্দেশনা ছিল তা তারা হাইকোর্টে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। আমরা প্রকৃত দলিল ও দুষ্টু চক্রের অবস্থান স্পষ্ট করায় আদালত তা খালাস করে দেন। এখন আমরা শীঘ্রই অবৈধ দোকার ভেঙে পার্কিংয়ে রূপান্তর করব। এবং প্রকৃত দোকান মালিকদের ব্যবসা করতে সহযোগিতা করব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ আলম প্রকাশ এসি শাহ আলম দেশ বর্তমানকে বলেন, একটি ডেভলপারের সাথে চুক্তি করেই দোকান নির্মাণ ও বিক্রি করছি আমরা। পার্কিংয়ে কেন দোকান নির্মাণ ও বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে অর্ধেক পার্কিং ও অর্ধেক দোকান করার চুক্তি হয়েছে।
মূল দোকান মালিকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারাই দোকান মালিকদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এসময় তারাই প্রকৃত দোকান মালিক সমিতি বলেও দাবি করেন তিনি। তবে দোকানগুলো ২০-২৫ লক্ষ টাকার মধ্যে বিক্রির কথা স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বসুধা বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার খান বলেন, কর্মচারী প্রনয় কুমার বিশ্বাসকে হাত করে এসি শাহ আলম ও শাহনেওয়াজ আমার অফিস দখলসহ কোটি কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে। এমনকি আমাকে হত্যাসহ গুম করারও হুমকি দেন তারা।
উল্লেখ্য, বসুধা বিল্ডার্স ডেভলপার বিগত ২০০৭ সালের ২০ নভেম্বর চউকের অনুমোদিত নকশা মোতাবেক ১০ তলা বিশিষ্ট বসুধা রেলওয়ে মেন্স সিটি সেন্টার মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু করে।